Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 7:51 pm

স্মরণীয়-বরণীয়

‘জগৎ জুড়িয়া আছে এক জাতি, সে জাতির নাম মানুষ জাতি’মানুষ কবিতার এই চরণ দুটি বাঙালি কবি ও ছড়াকার সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের লেখা। কবিতায় ছন্দের সমৃদ্ধির জন্য তিনি ছন্দের রাজা ও ছন্দের জাদুকর। তিনি তার কবিতায় ছন্দের কারুকাজ, শব্দ ও ভাষার অভূতপূর্ব ব্যবহার করেছেন। দেশাত্মবোধ, মানবপ্রীতি, ঐতিহ্যচেতনা, শক্তিসাধনা প্রভৃতি তার কবিতার বিষয়বস্তু। এছাড়া তিনি বিভিন্ন ভাষা থেকে বাংলায় অনুবাদও করেছেন। সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত ১৮৮২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কলকাতার সেন্ট্রাল কলেজিয়েট স্কুল থেকে এন্ট্রান্স (১৮৯৯) এবং জেনারেল অ্যাসেমব্লিজ ইনস্টিটিউশন (বর্তমান স্কটিশ চার্চ কলেজ) থেকে এফএ (১৯০১) পাস করেন। কাব্যচর্চায় আত্মনিয়োগ করার আগে তিনি তার বাবার ব্যবসায় কিছুদিনের জন্য যোগ দেন। প্রথম জীবনে তিনি মাইকেল মধুসূদন দত্ত, অক্ষয় কুমার বড়াল প্রমুখের দ্বারা প্রভাবিত হন। পরে রবীন্দ্র অনুসারী হলেও তিনি স্বতন্ত্র হয়ে ওঠেন। তিনি অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বের কাব্যসাহিত্যের সঙ্গে বাংলার যোগাযোগ ঘটান। নানা ধরনের ছন্দ নির্মাণ ও ছন্দ উদ্ভাবনে বিশেষ পারদর্শী ছিলেন তিনি। এজন্য তিনি ‘ছন্দের জাদুকর’ ও ‘ছন্দোরাজ’ নামে পরিচিতি পান। বাংলা ভাষার নিজস্ব বাগ্ধারা ও ধ্বনি-সহযোগে নতুন ছন্দসৃষ্টি তার কবিপ্রতিভার মৌলিক কীর্তি। মধ্যযুগে ভারতের ইতিহাস, সংস্কৃতি, পৌরাণিক বিষয় প্রভৃতি বুদ্ধিবৃত্তি-বিষয়ক বিভিন্ন ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন পারদর্শী। অনুবাদের মাধ্যমে তিনি বিশ্বের কাব্যসাহিত্যের সঙ্গে বাংলার যোগাযোগ ঘটান। আরবি, ফারসি, চীনা, জাপানি, ইংরেজি ও ফরাসি ভাষার বহু কবিতা অনুবাদ করে তিনি বাংলা সাহিত্য বৈচিত্র্যের সমৃদ্ধি সাধন করেন। বাংলা শব্দের সঙ্গে আরবি-ফার্সি শব্দের সমন্বিত ব্যবহার দ্বারা বাংলা কাব্যভাষার শক্তি বৃদ্ধির প্রাথমিক কৃতিত্ব তারই। সমাজের অবহেলিত, অস্পৃশ্য ও সাধারণ মানুষ নিয়েও তিনি কবিতা লেখেন। নবকুমার, কবিরতœ, অশীতিপর শর্মা, ত্রিবিক্রম বর্মণ, কলমগীর প্রভৃতি ছদ্মনামে তিনি কবিতা রচনা করেন। ছন্দের রাজা সত্যেন্দনাথ দত্ত ১২টির ওপর কাব্যগ্রন্থ রচনা করেছেন। তার উল্লেখযোগ্য রচনাবলি হলোÑসবিতা, সন্ধিক্ষণ, বেণু ও বীণা, হোম শিখা, ফুলের ফসল, কুহু ও কেকা, তুলির লিখন, অভ্র-আবীর, কাব্যসঞ্চয়ন প্রভৃতি। তার অনুবাদ কাব্যগুলো হলো তীর্থরেণু, তীর্থ-সলিল, মণিমঞ্জুষা এবং গদ্যরচনার মধ্যে রয়েছে জš§দুঃখী, চীনের ধূপ, রঙ্গমল্লী প্রভৃতি। ১৯২২ সালের ২৫ জুন তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

কাজী সালমা সুলতানা