ভাষা আন্দোলনের অন্যতম নেতা, মুক্তিযোদ্ধা ও আইনজীবী গাজীউল হক। পুরো নাম আবু নছর মোহাম্মদ গাজীউল হক। গাজীউল হক ১৯২৯ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজলার নিতিন্তপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৫২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে বিএ সম্মানসহ এমএ পাস করেন। ১৯৫৬ সালে তিনি এলএলবি ডিগ্রি লাভ করেন। গাজীউল হক ১৯৪২ সালে ব্রিটিশবিরোধী মিছিলে থাকা অবস্থায় তিনি কারারুদ্ধ হন। তিনি ১৯৪৪ সালে ‘বঙ্গীয় মুসলিম ছাত্রলীগ’ বগুড়া জেলা শাখার যুগ্ম সম্পাদক নিযুক্ত হন। ’৫২-এর ২১ ফেব্রুয়ারিতে আমতলায় ঐতিহাসিক সভায় তিনি সভাপতিত্ব করেন এবং ১৪৪ ধারা ভঙ্গের ঘোষণার সিদ্ধান্ত দেন। তার রচিত ‘ভুলব না ভুলব না ভুলব না এই একুশে ফেব্রুয়ারি ভুলব না’ গানটি গেয়ে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত প্রভাতফেরি করা হয়। ১৯৫৩ ও ১৯৫৪ সালের নির্বাচনের সময় তিনি গ্রেপ্তার হন। তাছাড়া ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গাজীউল হক ১৯৬২-র শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৪-র সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৯-এর গণ-আন্দোলন, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি লেখক ও সংগঠকের ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭১ সালে তার নেতৃত্বে উত্তরবঙ্গের আড়িয়া ক্যান্টনমেন্ট শত্রুমুক্ত হয়। পরে কলকাতায় গিয়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধের মুখপত্র ‘জয়বাংলা’ পত্রিকার বিক্রয় বিভাগের দায়িত্বসহ আকাশবাণী ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে রণাঙ্গনের সংবাদ প্রচারের দায়িত্ব পালন করেন। গাজীউল হক ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’র অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। তার রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থÑজেলের কবিতা, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, বাংলাদেশ আনচেইন্ড, মিডিয়া ল’স অ্যান্ড রেগুলেশন্স ইন বাংলাদেশ, বাংলাদেশের গণমাধ্যম আইন ও বিধিমালা প্রভৃতি। তিনি রাষ্ট্রভাষা পদক, ভাষাসৈনিক পদক, একুশে পদকসহ অনেক পদক ও সম্মাননায় ভূষিত হন।
কাজী সালমা সুলতানা
