বাংলা ভাষার অন্যতম প্রধান কবি জীবনানন্দ দাশ। তিনি বাংলা কাব্যে আধুনিকতার পথিকৃৎদের মধ্যে অন্যতম। তার প্রথম কাব্যে কবি নজরুল ইসলামের প্রভাব থাকলেও দ্বিতীয় কাব্য থেকেই তিনি হয়ে ওঠেন মৌলিক ও ভিন্ন পথের অনুসন্ধানী। বুদ্ধদেব বসু তাকে ‘নির্জনতম কবি’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। জীবনানন্দ দাশ ১৮৯৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি বরিশাল শহরে জš§গ্রহণ করেন। তার মাতা কুসুমকুমারী দাশ ছিলেন একজন কবি। ১৯১৯ সালে তিনি ইংরেজিতে সম্মানসহ বিএ ও ১৯২১ সালে এমএ পাস করেন। পরে কিছুদিন আইন কলেজে লেখাপড়া করেন। জীবনানন্দ কলকাতা সিটি কলেজে ১৯২২ সালে ইংরেজি সাহিত্যে অধ্যাপনার মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯২৯ সালে তিনি সদ্য প্রতিষ্ঠিত বাগেরহাট প্রফুল্ল চন্দ্র কলেজে যোগ দেন, কিন্তু কিছুদিন পর চাকরি ছেড়ে কলকাতায় চলে যান। একই বছর তিনি দিল্লির রামযশ কলেজে যোগ দেন এবং ১৯৩০-এ আবার ফিরে আসেন। কিছুকাল বেকার থেকে জীবনানন্দ ১৯৩৫ সালে বরিশালের বিএম কলেজে যোগদান করেন। দেশ বিভাগের কিছু আগে তিনি সপরিবারে কলকাতা চলে যান। জীবনানন্দের কাব্যচর্চার শুরু অল্প বয়স থেকেই। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ঝরাপালক প্রকাশিত হয় ১৯২৭ সালে। তার রচিত কাব্যগ্রন্থ ধূসর পাণ্ডুলিপি, বনলতা সেন, মহাপৃথিবী, সাতটি তারার তিমির, রূপসী বাংলা, বেলা অবেলা কালবেলা প্রভৃতি। উপন্যাসের মধ্যে মাল্যবান, সুতীর্থ, জলপাইহাটি, জীবন প্রণালী ও বাসমতীর উপাখ্যান উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া বহু অগ্রন্থিত কবিতা বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। জীবদ্দশায় কথাসাহিত্যিক হিসেবে জীবনানন্দের কোনো পরিচিতি ছিল না। তিনি সম্পূর্ণ নিভৃতে উপন্যাস-ছোটগল্প লিখেছিলেন এবং জীবদ্দশায় একটিও প্রকাশ করে যাননি। তিনি ২১টি উপন্যাস এবং দুই শতাধিক গল্প রচনা করেছিলেন; যার একটিও তার জীবদ্দশায় প্রকাশিত হয়নি। চরম দারিদ্র্যের মধ্যে তিনি দিনাতিপাত করেছেন। তার মৃত্যুর পর উপন্যাস-গল্পের পাণ্ডুলিপির খাতাগুলো আবিষ্কৃত হয়। ১৯৯০ সালে প্রথম জীবনানন্দের সব প্রবন্ধ একসঙ্গে করে প্রকাশিত হয় জীবনানন্দ দাশের প্রবন্ধ সমগ্র। তার রূপসী বাংলা কবিতা ষাটের দশকে বাঙালির জাতিসত্তা বিকাশের আন্দোলন ও ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে সংগ্রামী বাঙালিকে তীব্রভাবে অনুপ্রাণিত করে। জীবনানন্দের ‘বনলতা সেন’ কাব্যগ্রন্থ নিখিলবঙ্গ রবীন্দ্রসাহিত্য সম্মেলনে পুরস্কৃত হয়। এ গ্রন্থটি ভারতের সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কারও পায়। ১৯৫৪ সালের ২২ অক্টোবর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা