খ্যাতিমান শিশুসাহিত্যিক, কবি ও সম্পাদক সুনির্মল বসু। সাহিত্যের সাধক এই কবি আজীবন শিশুসাহিত্যের সেবায় ব্র্রতী ছিলেন। তার রচিত অসংখ্য কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক ও জীবনীগ্রন্থ বাংলা সাহিত্যের সম্পদ। ‘সবার আমি ছাত্র’ তারই একটি বিখ্যাত কবিতা। সাঁওতাল পরগনার পাহাড়-নদী-জঙ্গল সুনির্মলের শিশুমনকে প্রবলভাবে আকৃষ্ট করত। কবিতা রচনার অনুপ্রেরণা জাগায়। এই মনোরম পরিবেশ সুনির্মলের কবি প্রতিভা বিকাশে প্রেরণা জোগায়। পরবর্তীতে কবিতায় বিভিন্ন ছন্দের সার্থক প্রয়োগ তাকে যশস্বী করে তোলে। সুনির্মল বসু ১৯০২ সালের ২০ জুলাই বিহারের গিরিডি নামক স্থানে জš§গ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস ছিল ঢাকা জেলার বিক্রমপুরের মালখানগর। তিনি পাটনার গিরিডি স্কুল থেকে ম্যাট্রিক (১৯২০) পাস করে কলকাতার সেন্ট পলস কলেজে ভর্তি হন, কিন্তু এ সময় গান্ধীজীর অসহযোগ আন্দোলনে (১৯২১) তিনি যোগ দেন। ফলে তার কলেজের পড়া অসমাপ্ত থেকে যায়। কিশোর বয়স থেকেই সুনির্মল বসু কবিতা লেখা ও ছবি আঁকার প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন। সাহিত্য রচনাকেই তিনি জীবিকা হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। কেবল সাহিত্যকে নির্ভর করে বেঁচে থাকা তখনও কৃচ্ছ্রতা ভোগের নামান্তর ছিল। তিনি সেই জীবনটাই স্বেচ্ছায় গ্রহণ করেছিলেন। তার প্রথম কবিতা ‘প্রবাসী’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। প্রথম প্রকাশিত কবিতা গ্রন্থের নাম ‘হাওয়ার দোলা’। সারাজীবন বহু শিশুসাহিত্য, কবিতা, সরস ছড়া, গল্প, উপন্যাস, রূপকথা, ভ্রমণকাহিনী, কৌতুক, নাটক ইত্যাদি রচনা করে শিশুসাহিত্যের ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করেছেন। এছাড়া বহু শিশুগ্রন্থ সম্পাদনা করেন তিনি। সুনির্মল সমকালের একমাত্র শিশুতোষ পাক্ষিক পত্রিকা কিশোর এশিয়ার পরিচালক ছিলেন। ১৯৫৬ সালে তিনি শিশুসাহিত্য রচনার জন্য ‘ভুবনেশ্বরী’ পদক লাভ করেন। তিনি দিল্লিতে অনুষ্ঠিত প্রবাসী বঙ্গসাহিত্য সম্মেলনের শিশুসাহিত্য শাখার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তার রচিত গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোÑহাওয়ার দোলা, ছানাবড়া, বেড়ে মজা, হৈ চৈ, হুলুস্থূল, কথাশেখা, পাততাড়ি, ছন্দের টুংটাং , আনন্দনাড়–, শহুরে মামা, কিপটে ঠাকুরদা, টুনটুনির গান, গুজবের জন্ম, বীর শিকারী, লালন ফকিরের ভিটে, পাতাবাহার, ইন্তিবিন্তির আসর, পাহাড়ে জঙ্গলে ইত্যাদি। সম্পাদনা করেছেন শিশুতোষ গ্রন্থ ছোটদের চয়নিকা ও ছোটদের গল্প সঞ্চয়ন। ‘জীবন খাতার কয়েক পাতায়’ তার লেখা আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ। ১৯৫৭ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা