Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 10:36 pm

স্মরণীয়-বরণীয়

বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী শহিদ মুক্তিযোদ্ধা ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে চরম সাহসিকতা আর অসামান্য বীরত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ যে সাত বীরকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সামরিক সম্মান বীর শ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত করা হয়, তিনি তাদের অন্যতম। নূর মোহাম্মদ শেখ ১৯৩৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি নড়াইল জেলার মহিষখোলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫৯ সালের ১৪ মার্চ তিনি পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলসে যোগ দেন। প্রশিক্ষণ শেষে নূর মোহাম্মদ দিনাজপুর সেক্টরে পদায়িত হন। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধে তিনি দিনাজপুরে আহত হন। যুদ্ধে বীরত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ সরকার তাকে ‘তমগা-এ-জং’ ও ‘সিতারা-এ-হরব’ পদকে ভূষিত করে। ১৯৭০ সালের আগস্ট মাসে তিনি যশোর সেক্টর হেডকোয়ার্টার্সে বদলি হন। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে গ্রামের বাড়িতে ছুটি কাটাতে এসে নূর মোহাম্মদ মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেন। মুক্তিযুদ্ধে তিনি যশোর ৮নং সেক্টরে যুদ্ধরত ছিলেন। ১৯৭১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর যশোর জেলার গোয়ালহাটি গ্রামে নূর মোহাম্মদকে অধিনায়ক করে পাঁচজনের সমন্বয়ে গঠিত একটি স্ট্যান্ডিং পেট্রোল পাঠানো হয়। সেখানে হঠাৎ পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ওই পেট্রোলটিকে তিন দিক থেকে ঘিরে ফেলে গুলিবর্ষণ শুরু করে। একসময় সিপাহি নান্নু মিয়া গুলিবিদ্ধ হলে নূর মোহাম্মদ তাকে কাঁধে তুলে নেন এবং হাতের এলএমজি দিয়ে গুলি চালাতে শুরু করেন। এতে শত্রুপক্ষ পশ্চাদপসরণ করতে বাধ্য হয়। হঠাৎ করেই শত্রুর মর্টারের একটি গোলা এসে লাগে তার ডান কাঁধে, যাতে তিনিও মারাত্মকভাবে আহত হন। আহত হলেও তিনি নিজের প্রাণ বাঁচানোর কথা চিন্তা না করে সিপাহি নান্নু মিয়ার প্রাণ রক্ষার জন্য ব্যকুল হন। সহযোদ্ধারা তাকেও অনুরোধ করলেন তাদের সঙ্গে যাওয়ার জন্য। কিন্তু এতে সবাই মারা পড়বে, এই আশঙ্কায় তিনি রণক্ষেত্র ত্যাগ করতে রাজি হলেন না। বাকিদের অধিনায়কোচিত আদেশ দিলেন তাকে রেখে চলে যেতে। শেষ পর্যন্ত তার আদেশ অনুসরণ করে তাকে রেখেই নিরাপদে সরে যান সহযোদ্ধারা। এদিকে সমানে গুলি ছুড়তে লাগলেন রক্তাক্ত নূর মোহাম্মদ। যুদ্ধে তিনি শত্রুপক্ষের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করেন। কিন্ত শত্রুরা মৃত্যুপথযাত্রী বীর যোদ্ধাকে নিষ্ঠুরভাবে নির্যাতন করে হত্যা করে। পরে সহযোদ্ধারা তার মৃতদেহ উদ্ধার করে সীমান্তবর্তী কাশীপুরে সমাহিত করেন। মুক্তিযুদ্ধে তার বীরত্ব ও আত্মত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার তাকে ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ খেতাবে ভূষিত করে।

কাজী সালমা সুলতানা