ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামী, কবি ও বিশিষ্ট বাগ্মী সরোজিনী নাইডু। তিনি দ্য নাইটেঙ্গেল অব ইন্ডিয়া নামে পরিচিত। সরোজিনী নাইডু ১৮৭৯ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ভারতের হায়দরাবাদে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস ছিল বাংলাদেশের বিক্রমপুরের ব্রাহ্মণগাঁওয়ে। ১২ বছর বয়সে সরোজিনী মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় গোটা মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সিতে প্রথম স্থান অর্জন করেন। ১৮৯১ থেকে ১৮৯৪ সাল পর্যন্ত তিনি গতানুগতিক পড়াশোনা ছেড়ে নানা বিষয়ে অধ্যয়ন করেন। ১৮৯৫ সালে প্রথমে লন্ডনের কিংস কলেজ এবং পরে ক্যামব্রিজের গার্টন কলেজে তিনি উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের মাধ্যমে সরোজিনী স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগ দেন। ১৯১৫ সালে তিনি অল ইন্ডিয়া ন্যাশনাল কংগ্রেসে যোগ দেন। তিনি সমগ্র ভারতে সভা-সমাবেশ করে নারী মুক্তি, শ্রমিক অধিকার রক্ষা ও জাতীয়তাবাদের সমর্থনে তার বার্তা প্রচার করেন। তিনি ১৯১৬ সালে বিহারে নীলচাষিদের অধিকারের দাবিতে প্রচারাভিযানে অংশ নেন। ১৯১৭ সালে নারীর ভোটাধিকারের দাবিতে উইমেন ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন গঠিত হলে নাইডু এই সংগঠনের সদস্য হন। ১৯২৫ সালে তিনি কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচিত হন। স্বাধীন ভারতে তিনি উত্তর প্রদেশের রাজ্যপালও নির্বাচিত হন। গান্ধীজিসহ অন্যান্য নেতা গ্রেপ্তার হলে সরোজিনী ধারাসন সত্যাগ্রহে নেতৃত্ব দেন। ১৯২৬ সালে তিনি নারীশিক্ষা অধিকার আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৩০ সালের ২৬ জানুয়ারি জাতীয় কংগ্রেস ব্রিটিশ সাম্রাজ্য থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করে। এ কারণে ৫ মে গান্ধীজিকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর কিছুদিন পর গ্রেপ্তার হন সরোজিনী। ১৯৩১ সালে কংগ্রেসের প্রতিনিধি হিসেবে তিনি গান্ধীর সঙ্গে গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নেন। ১৯৩২ সালে নাইডু লবণ সত্যাগ্রহ আন্দোলনে অংশগ্রহণের জন্য গ্রেপ্তার হন এবং অসুস্থতার কারণে পরে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। ১৯৪২ সালের ২ অক্টোবর ‘ভারত ছাড়’ আন্দোলনে জড়িত থাকার জন্য তাকে গ্রেপ্তার করে ২১ মাস কারান্তরীণ রাখা হয়। ১৯৪৭ সালের মার্চ মাসে এশিয়ান রিলেশন্স কনফারেন্সে স্টিয়ারিং কমিটিতে তিনি সভাপতিত্ব করেন। সরোজিনী তার বাগ্মিতার জন্য খ্যাতিমান ছিলেন। এছাড়া তিনি একজন খ্যাতিমান কবিও ছিলেন। সরোজিনী নাইডু ছিলেন একজন খ্যাতিমান কবি। তার আজীবন কর্মসাধনার স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার সরোজিনী নাইডু স্বর্ণপদক প্রবর্তন করে। ১৯৪৯ সালের ২ মার্চ এলাহাবাদে তার মৃত্যু হয়।
কাজী সালমা সুলতানা