বীর মুক্তিযোদ্ধা ভাস্কর ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী। ১৯৭১ সালে এ দেশের লাখ লাখ মেয়েদের মতো তিনিও অমানবিক নির্যাতনের শিকার হন পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর। স্বাধীনতা-উত্তরকালে সামাজিক চোখ রাঙানিকে উপেক্ষা করে জনসমক্ষে যুদ্ধকালীন নির্যাতনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন। পরবর্তী সময়ে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সহ-সভানেত্রী হিসেবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে কাজ করেছেন। ২০০১ সালে জাপানে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তিনি বাংলাদেশের পক্ষে অংশ নেন। ২০০৪ সালে রিডার্স ডাইজেস্ট পত্রিকায় তিনি ‘হিরো অব দি মান্থ’ মনোনীত হয়েছিলেন। শিল্পকলায় অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ২০১০ সালে তিনি দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ লাভ করেন। স্বাধীনতাযুদ্ধে অবদানের জন্য ২০১৬ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে মুক্তিযোদ্ধা খেতাব দেয়। ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী ১৯৪৭ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি খুলনায় জš§গ্রহণ করেন। তার নানা অ্যাডভোকেট আব্দুল হাকিম ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের শাসনকালে স্পিকার ছিলেন। প্রিয়ভাষিণী পারিবারিকভাবে একটি শিল্প-সাংস্কৃতিক পরিবেশের মাঝে বেড়ে ওঠেন। ১৯৫২ সালে প্রিয়ভাষিণী নানার পরিবারের সঙ্গে ঢাকায় আসেন। ভর্তি হন টিকাটুলীর নারী শিক্ষা মন্দিরে। পরে সিদ্ধেশ্বরী গার্লস স্কুলে কিছুদিন লেখাপড়া করেন। সেসময় শহিদ জাহানারা ইমাম ছিলেন ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা। তিনি খুলনার পাইওনিয়ার গার্লস স্কুল থেকে এসএসসি এবং খুলনা গার্লস স্কুল থেকে এইচএসসি ও ডিগ্রি পাস করেন। ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী ১৯৭৭ সাল থেকে ১৯৯৮ পর্যন্ত তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছেন। কিছুদিন স্কুলে শিক্ষকতাও করেছেন। তিনি ইউএনডিপি, ইউএনআইসিইএফ, এফএও, কানাডিয়ান দূতাবাসসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছেন। ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী ভাস্কর হিসেবেও সুনাম অর্জন। ঘর সাজানো এবং নিজেকে সাজানোর জন্য দামি জিনিসের পরিবর্তে সহজলভ্য জিনিস দিয়ে কীভাবে সাজানো যায় তার সন্ধান করা থেকেই তার শিল্পচর্চার শুরু। ঝরা পাতা, মরা ডাল, গাছের গুঁড়ি দিয়ে তিনি গৃহের নানা শিল্পকর্ম তৈরি করতেন। ১৯৯০ সালে যশোর জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত হয় তার প্রথম প্রদর্শনী। এরপর ১৯৯৪ সালে ঢাকার বেঙ্গল ফাউন্ডেশনে তার দ্বিতীয় প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। প্রিয়ভাষিণীর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ভাস্কর্য হলোÑকনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প, শরণার্থী, অস্তগামী জীবন, পোর্ট্রেট অব আব্রাহাম লিংকন, পোর্ট্রেইট অব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মিছিল, ভালোবাসার দিন, নারী নির্যাতন, মুক্তিযুদ্ধের নানা ইতিহাস ইত্যাদি। ২০১৭ সালের ৬ মার্চ তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা