Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 10:36 pm

স্মরণীয়-বরণীয়

‘মতের ভিত্তি যে-জাতি যত শক্ত, সেই জাতিই তত বড়। উন্নতির পথ তাদের কাছেই খোলা’ উক্তিটি খ্যাতনামা শিশুসাহিত্যিক বিমল ঘোষের। বাংলা সাহিত্যের পাঠকদের কাছে যিনি ‘মৌমাছি’ নামেই সমধিক পরিচিত। বিমল ঘোষ ১৯১০ সালের ১২ ডিসেম্বর পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলার বেলিয়াতোড়ে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কলকাতার নারকেলডাঙা জর্জ হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করে গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজে (বর্তমানে গভর্নমেন্ট কলেজ অব আর্ট অ্যান্ড ক্রাফট) ভর্তি হন মুদ্রণ ও বিজ্ঞাপনবিষয়ক ক্ষেত্রে শিক্ষালাভের জন্য। বিমল ঘোষ ছাত্রাবস্থায়ই লেখালেখি করতেন। সে সময়েই তার লেখা ছোটদের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখা ছাপা হয়। আর্ট কলেজে শিক্ষালাভের পর তিনি কর্মজীবন শুরু করেন অ্যাডভান্স পত্রিকার বিজ্ঞাপন বিভাগে। পরে যোগ দেন আনন্দবাজার পত্রিকায়। বিমল ঘোষের উদ্যোগে ও ব্যবস্থাপনায় ১৯৪০ সালে আনন্দবাজার পত্রিকার ছোটদের আসর আনন্দমেলা প্রতিষ্ঠা ও প্রসার লাভ করে। এ সময় তিনি মৌমাছি ছদ্মনামে বিখ্যাত হয়ে ওঠেন। তিনি তার বন্ধুদের সঙ্গে পরামর্শ করেই ‘মণিমেলাদ’ নামের সংগঠন গড়ার পরিকল্পনা করেন। আনন্দমেলার মাধ্যমে শিশু ও কিশোরদের জন্য গড়ে ওঠা এই সংগঠন এক সময় বাংলা ও বাংলার বাইরে বিশেষ প্রভাব বিস্তার করে। চল্লিশের দশকে সেনোলা রেকর্ড কোম্পানি থেকে তার একটি নাটক ‘সোনার বাংলা’র গ্রামোফোন রেকর্ড দু’খণ্ডে প্রকাশিত হয়। তার লেখা প্রথম উপন্যাস ‘মায়ের বাঁশি’ (১৯৫৮)। ছেচল্লিশের দাঙ্গা ও তৎপরবর্তী ঘরছাড়া মানুষের উদ্বাস্তু জীবন নিয়ে লেখা বিমল ঘোষের ‘ঝড়ের পালক’। বিমল ঘোষ তার প্রতিটি গল্পেই শিশুদের জন্য কিছু না কিছু বার্তা রেখেছেন, যা তাদের মানস গঠনে সহায়ক হতে পারে। এমনই দুটি গল্পগ্রন্থ ‘যে গল্পের শেষ নেই’ (১৯৪২) এবং ‘নয়া যুগের রূপকথা’ (১৯৪৭)। ছোটদের জন্য বিমল ঘোষ অজস্র ছড়া, কবিতা, নাটক, গল্প, উপন্যাস ও প্রবন্ধ রচনা করেছেন। তার রচিত শিশু সাহিত্যের সংখ্যা ১৪০। ‘মায়াময়ূর’ তার জনপ্রিয় নাটক। চেঙাবেঙা বইটির জন্য তিনি রাষ্ট্রীয় পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৫৩ সালে বুখারেস্টে অনুষ্ঠিত বিশ্ব যুব উৎসবে তিনি ভারত সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দেন। বিমল ঘোষ আকাশবাণীর সঙ্গে দীর্ঘদিন যুক্ত ছিলেন। বিমল ঘোষের গ্রন্থগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য; ইউরোপের অগ্নিকোণে, কামাল পরদেশী ও চেঙাবেঙা। ১৯৮২ সালের ৭ মার্চ বিমল ঘোষ মৃত্যুবরণ করেন।