পূর্ববাংলার মার্কসবাদী আন্দোলনের কর্মী ও সাহিত্যিক সোমেন চন্দের আজ ৮০তম মৃতুবার্ষিকী। ১৯৪২ সালের ৮ মার্চ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে রাজনৈতিক ডামাডোলের মধ্যে রেলওয়ের কর্মীদের একটি মিছিলের নেতৃত্ব দেয়া অবস্থায় ঢাকার সূত্রাপুরের সেবাশ্রমের কাছে আততায়ীর গুলিতে তিনি নিহত হন। সোমেন চন্দ ১৯২০ সালের ২৪ মে কেরানীগঞ্জের শুভাড্ডা ইউনিয়নের তেঘরিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৩৬ সালে তিনি পগোজ স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষার উত্তীর্ণ হন। ১৯৩৭ সালে তিনি ঢাকা মিটফোর্ড মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন; কিন্তু খারাপ স্বাস্থ্যের কারণে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারেননি। এ সময় তিনি প্রগতি লেখক সংঘে যোগদান করেন এবং মার্কসবাদী রাজনীতি ও সাহিত্য আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন। বাংলা সাহিত্যে তিনিই প্রথম গণসাহিত্যের ওপর কাজ করেন। ১৯৪১ সালে তিনি প্রগতি লেখক সংঘের সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৩৯ থেকে ১৯৪২ সাল পর্যন্ত সোমেন চন্দের সাহিত্যজীবনের পরিধি। তার জীবদ্দশায় গ্রন্থাকারে কোনো রচনা প্রকাশিত হয়নি। মৃত্যুর পর ঢাকা থেকে সংকেত ও অন্যান্য গল্প (১৯৪৩) এবং কলকাতা থেকে বনস্পতি ও অন্যান্য গল্প (১৯৪৪) প্রকাশিত হয়। মাত্র ১৭ বছর বয়সে তিনি ‘বন্যা’ উপন্যাসটি লেখেন। ১৯৪০ সালে তার ‘বনস্পতি’ গল্পটি প্রথমে ক্রান্তি পত্রিকায় ছাপা হয়। তার রচিত গল্পগুলোর মধ্যে ইঁদুর, সংকেত, বনস্পতি, দাঙ্গা, সত্যবতীর বিদায়, উৎসব, মুখোশ প্রভৃতি বিখ্যাত। একটি উপন্যাস, ২৮টি গল্প, তিনটি কবিতা, দুটি নাটকসহ তার লেখা চিঠির সংকলনও প্রকাশিত হয়েছে। সোমেন চন্দের নামানুসারে পুরস্কারের প্রবর্তন করে কলকাতার বাংলা একাডেমি। তার মৃত্যু সম্বন্ধে সরদার ফজলুল করিম স্মৃতিচারণে বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন বাংলার সব জেলা শহরে ছড়িয়ে পড়ে, যার মধ্যে ঢাকা শহর ছিল অন্যতম শক্তিশালী কেন্দ্র। ১৯৪২ সালের ৮ মার্চ ঢাকার বুদ্ধিজীবী ও লেখকরা এক ফ্যাসিবাদবিরোধী সম্মেলন আহ্বান করেন। স্থানীয় জেলা পার্টির অনুরোধে কমরেড বঙ্কিম মুখার্জি ও জ্যোতি বসু সেখানে বক্তা হিসেবে যান। সম্মেলন উপলক্ষে খুবই উত্তেজনা সৃষ্টি হয় এবং রাজনৈতিক মহল প্রায় তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। সম্মেলনের দিন সকালে উদ্যোক্তাদের অন্যতম তরুণ সাহিত্যিক সোমেন চন্দ ২২ বছর বয়সে আততায়ীর হাতে নিহত হন। তিনিই বাংলার ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের প্রথম শহিদ।
কাজী সালমা সুলতানা