প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীর আজ ৯০তম জন্মবার্ষিকী। ছয় দশকের বেশি সময় তিনি শিল্পচর্চার মাধ্যমে দেশের চারুকলার জগৎ সমৃদ্ধ করেছেন। ১৯৮৬ সালে তিনি একুশে পদক লাভ করেন। এছাড়া তিনি ২০১০ সালে সুফিয়া কামাল পদক ও ২০১৪ সালে শহিদ আলতাফ মাহমুদ পদকে ভূষিত হন। কাইয়ুম চৌধুরী ১৯৩২ সালের ৯ মার্চ ফেনী জেলায় এক জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। মক্তবে তার শিক্ষার হাতেখড়ি, পরে ভর্তি হন চট্টগ্রামের নর্মাল স্কুলে। তিনি ১৯৪৯ সালে ময়মনসিংহ সিটি কলেজিয়েট স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। স্কুলজীবন থেকে তিনি আঁকাআঁকির প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন। ম্যাট্রিক পাস করার পর সে বছরই তিনি আর্ট ইনস্টিটিউটে (বর্তমান চারুকলা অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) ভর্তি হন। ১৯৫৪ সালে তিনি সেখান থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি শিক্ষক হিসেবে পান শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনকে। তিনি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। শিক্ষাজীবন শেষ করেই নিমগ্ন হন শিল্পচর্চায়। ১৯৫৭ সালে আর্ট কলেজে শিক্ষকতায় যোগদান করেন। দেশের এই শীর্ষ শিল্পপীঠে ৩৭ বছর শিক্ষকতার পর ১৯৯৭ সালে তিনি অবসরে যান। ১৯৫৯ ও ১৯৬১ সালে রেলওয়ের টাইমটেবিলের প্রচ্ছদ এঁকে তিনি সেরা পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৬১ সালে তিনি অবজারভার পত্রিকায় চিফ আর্টিস্ট হিসেবে যোগদান করেন। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে ষাটের দশক ও তার পরবর্তী সময়ে দেশের প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে তার চিত্রকর্ম প্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করেছে। তিনি সন্ধানী প্রকাশনী ও মাওলা ব্রাদার্স প্রকাশনা সংস্থার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। কাইয়ুম চৌধুরী তেলরং, জলরং, কালি-কলম, মোমরং, রেশমছাপ প্রভৃতি নানা মাধ্যমে কাজ করেছেন। বর্ণিল পটভূমিতে মোটাদাগের নকশা তার প্রধানতম অঙ্কনশৈলী। তিনি লাল, নীল, সবুজ এই তিনটি রং প্রচুর পরিমাণে ব্যবহার করেন। তার চিত্রাবলিতে এদেশের লোকশিল্পসুলভ পুতুল, পাখা, হাঁড়ি, শীতলপাটি, কাঁথা প্রভৃতির ব্যবহার লক্ষণীয়। বাংলার আবহমান নিসর্গ প্রকৃতি, নদী-বৃক্ষ-মানুষ ক্যানভাসের পর ক্যানভাসে তিনি তুলিতে তুলে ধরেন। পাঁচটি একক চিত্রপ্রদর্শনী এবং দেশ-বিদেশে বহু দলবদ্ধ প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেন। নিরন্তর নিষ্ঠা আর সাধনায় অনুপ্রাণিত করেছেন বহু শিক্ষার্থী ও শিল্পীকে। ২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের ক্ল্যাসিকাল মিউজিক ফেস্টিভালের চতুর্থ দিনে বক্তব্য দেয়ার সময় আকস্মিকভাবে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা