বিখ্যাত লেখক, কথাসাহিত্যিক সুবোধ ঘোষ। বাংলা সাহিত্যের অঙ্গনে তিনি তার অসাধারণ রচনা সম্ভারের মাধ্যমে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেন। সুবোধ ঘোষ ১৯০৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর বিহারের হাজারীবাগে জন্মগ্রহণ করেন। তার আদিনিবাস মুন্সীগঞ্জের বিক্রমপুরের বহর গ্রামে। পড়ালেখায় অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন তিনি। পাশাপাশি প্রতœতত্ত্ব, পুরাতত্ত্ব এমনকি সামরিক বিদ্যায়ও তার যথেষ্ট দক্ষতা ছিল। গত শতকের চল্লিশ দশকের বাংলা সাহিত্যের কাল পর্বের জীবন শিল্পী সুবোধ ঘোষ। তিনি নিজ মেধা মনন আর অভিজ্ঞতার আলোকে অসাধারণ রচনা সম্ভাবের মাধ্যমে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে সমর্থ হন। তার প্রথম রচিত গল্প ‘অযান্ত্রিক’, এরপর ‘ফসিল’। গল্প দুটি বাংলা সাহিত্যের যুগান্তকারী গল্প হিসেবে আলোড়ন সৃষ্টি করে। এরপর তিনি রচনা করেন আরও একটি বিখ্যাত গল্প ‘থির বিজুরি’। ভাষার ওপর অনায়াস দক্ষতার প্রমাণ মেলে তার বিভিন্ন স্বাদের গল্পে। চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক ঘটক ১৯৫৮ সালে তার অযান্ত্রিক গল্প নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। এ ছাড়া তার রচিত ছোটগল্প ‘জতুগৃহ’ অবলম্বনেও একাধিক চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। সুবোধ ঘোষ ম্যাট্রিকুলেশন পাস করে হাজারীবাগের সেন্ট কলম্বাস কলেজে ভর্তি হয়ে অভাব-অনটনের জন্য তিনি পড়াশোনা ছেড়ে দেন। পড়াশোনা ছেড়ে কলেরা মহামারি আকার নিলে বস্তিতে টিকা দেয়ার কাজ করেন। এরপরই শুরু হয় তার কঠিন জীবন। কর্মজীবন শুরু করেন বাসের কন্ডাক্টর হিসেবে। এ ছাড়া তিনি টিকা দেয়ার চাকরি, ট্রাক ড্রাইভার, সার্কাস পার্টিতে ক্লাউনের ভূমিকায় কাজ করেন। ত্রিশের দশকের শেষে তিনি আনন্দবাজার পত্রিকার রবিবাসরীয় বিভাগে সহকারী পদে যোগ দেন। ক্রমেই তিনি সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটর, অন্যতম সম্পাদকীয় পদে উত্তীর্ণ হন। অযান্ত্রিক ও ফসিল ছাড়াও তার উল্লেখযোগ্য রচনা জতুগৃহ, থির বিজুরি, ভারতের প্রেমকথা, তিলাঞ্জলী, গঙ্গোত্রী, ত্রিয়ামা, ভালোবাসার গল্প ও শতকিয়া। সুবোধ ঘোষ উপন্যাস রচনাতেও প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেন। ১৯৪৪ সালে রচনা করেন তার প্রথম উপন্যাস ‘তিলাঞ্জলী’। মন্বন্তরের পটভূমিকায় রচিত এ উপন্যাসে তিনি রাজনৈতিক মতাদর্শকে উপস্থাপনের চেষ্টা করেন। চলচ্চিত্রায়ণ সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি আনন্দ পুরস্কার ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগত্তারিণী পদক লাভ করেন। তিনি ১৯৮০ সালের ১০ মার্চ মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা
