Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 9:15 pm

স্মরণীয়-বরণীয়

দার্শনিক, মানবতাবাদী, চিন্তাবিদ ও বিজ্ঞানমনস্ক লেখক আরজ আলী মাতুব্বর। তিনি নিজ চেষ্টা ও সাধনায় বিজ্ঞান, ইতিহাস, ধর্ম ও দর্শনসহ বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করেন। যুক্তির আলোকে মানুষের মধ্যে মুক্তচিন্তার নতুন দিগন্ত উম্মোচন করে গেছেন। অতিথি শিক্ষক হিসেবে ক্লাস নিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। আরজ আলী মাতুব্বর ১৯০০ সালের ১৭ ডিসেম্বর বরিশাল জেলার চরবাড়িয়া ইউনিয়নের লামছড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার প্রকৃত নাম ছিল ‘আরজ আলী’। আঞ্চলিক ভূস্বামী হওয়ার সুবাধে তিনি ‘মাতুব্বর’ নাম ধারণ করেন। তিনি গ্রামের মক্তবে কিছুকাল পড়াশোনা করেন, যেখানে শুধু কোরআন ও অন্যান্য ইসলামিক ইতিহাসের ওপর শিক্ষা দেয়া হতো। পরে এক সহƒদয় ব্যক্তির সহায়তায় তিনি স্কুলের প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেন। সেই সঙ্গে তিনি নিজের ঐকান্তিক চেষ্টায়  লেখাপড়া শিখতে থাকেন। নিজের জ্ঞানের পিপাসা মেটাতে আরজ আলী বরিশাল পাবলিক লাইব্রেরির সব বাংলা বই তিনি পড়ে ফেলেন। তিনি তার ৮৬ বছরের জীবনকালে ৭০ বছরই লাইব্রেরিতে পড়াশোনা করেন। দর্শন ছিল তার প্রিয় বিষয়। কৃষিকাজ দিয়েই আরজ আলীর কর্মজীবনের শুরু। পরে কাজের অবসরে তিনি আমিনি পেশায় অসাধারণ দক্ষতা অর্জন করে জমি জরিপের কাজকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। তিনি তার অর্জিত সম্পদ দিয়ে গড়ে তোলেন ‘আরজ মঞ্জিল পাবলিক লাইব্রেরি’। তিনি অজ্ঞতা, কুসংস্কার ও ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরুদ্ধে লেখালেখি করেন। মানবকল্যাণ ও বিশ্বধর্ম আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি দরিদ্র ও মেধাবী ছাত্রদের জন্য বৃত্তি প্রদান, পাঠাগার স্থাপন ও রচনা প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করেন। তার প্রথম রচিত গ্রন্থ ‘সত্যের সন্ধানে’। এই গ্রন্থের প্রচ্ছদ তিনি নিজেই করেন। তার আরেক বই ‘সৃষ্টির রহস্য’ প্রকাশিত হওয়ার পর তিনি স্বশিক্ষিত দার্শনিক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। আরজ আলী বস্তুবাদী দর্শনে বিশ্বাসী ছিলেন। তার রচিত পাণ্ডুলিপির সংখ্যা মোট ১৫টি। তার বেশ কিছু লেখা ‘আরজ আলী মাতুব্বর রচনাবলী’ নামে কয়েকটি খণ্ডে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়েছে। কিছু লেখা ইংরেজিতেও ভাষান্তর করা হয়েছে। তদানীন্তন পাকিস্তানে তার কয়েকটি বইয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল। তিনি বাংলা একাডেমির আজীবন সদস্য ছিলেন। পেয়েছেন হুমায়ুন কবির স্মৃতি পুরস্কার ও উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী কর্তৃক বরণীয় মনীষী হিসেবে সম্মাননা। আরজ আলী মাতুব্বর ১৯৮৫ সালের ১৫ মার্চ  মৃত্যুবরণ করেন। তিনি নিজ দেহ ও চক্ষু মানবতার সেবায় উৎসর্গ করেন।

কাজী সালমা সুলতানা