খ্যাতিমান সাংবাদিক, আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, সাহিত্যিক ও বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্রুপাত্মক রচয়িতা আবুল মনসুর আহমদ। চল্লিশ, পঞ্চাশ ও ষাটের দশকজুড়ে তিনি পূর্ববাংলায় (বর্তমান বাংলাদেশ) ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে অবিরাম প্রচারণা চালান। ইত্তেহাদের সম্পাদক হিসেবে তিনি ভাষা আন্দোলনে ভূমিকা রাখেন। তার বিখ্যাত আত্মজীবনীমূলক রচনা ‘আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর (১৯৬৯)’। আবুল মনসুর আহমদ ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ধানিখোলা গ্রামে ১৮৯৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯২১ সালে ঢাকা কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। এরপর ১৯২৯ সালে কলকাতা রিপন ল কলেজ থেকে বিএল পাস করেন। শিক্ষাজীবন শেষে দীর্ঘ ৮ বছর আইন ব্যবসা করেন ও পরে সাংবাদিকতা পেশায় যুক্ত হন। আবুল মনসুর আহমদ একজন পেশাদার সাংবাদিক ছিলেন। তিনি যেসব সাময়িক পত্রিকায় কাজ করেন, সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সোলতান, মোহাম্মদী, দি মুসলমান, কৃষক, নবযুগ ও ইত্তেহাদ। রাজনীতিতেও আবুল মনসুর আহমদের ভূমিকা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি চিত্তরঞ্জন দাশের (১৮৭০-১৯২৫) স্বরাজ্য পার্টির রাজনীতি সমর্থন করেন এবং ১৯২৩ সালের বেঙ্গল প্যাক্টের মাধ্যমে হিন্দু-মুসলমান সম্প্রীতির যে প্রচেষ্টা চলে সে ব্যাপারে উৎসাহী ছিলেন। ১৯৪৯ সালে তিনি আওয়ামী মুসলিম লীগ দল প্রতিষ্ঠায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন। আবুল মনসুর আহমদ ১৯৫৩ থেকে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত আওয়ামী মুসলিম লীগের সহসভাপতি, ১৯৫৪ সালে ফজলুল হক মন্ত্রিসভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী, ১৯৫৫ সালে পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য, ১৯৫৬ সালে পূর্ব পাকিস্তানের যুক্তফ্রন্ট সরকারের শিক্ষামন্ত্রী এবং ১৯৫৬-৫৭ সালে বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান কর্তৃক সামরিক শাসন জারি হওয়ার পর তিনি কারারুদ্ধ হন এবং ১৯৬২ সালে কারাগার থেকে মুক্ত হন। এরপর তিনি রাজনৈতিক জীবন থেকে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি ব্যঙ্গাত্মক-আয়না, ফুড কনফারেন্স ও আত্মকথা, শেরে বাংলা হইতে বঙ্গবন্ধুসহ প্রভৃতি গ্রন্থ রচনা করেন। সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি ১৯৬০ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার, ১৯৭৯ সালে স্বাধীনতা দিবস পদক ও নাসিরউদ্দিন স্বর্ণপদক লাভ করেন। ১৯৭৯ সালের ১৮ মার্চ তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা