ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম নেতা মাস্টার দা সূর্য সেন। তিনি তৎকালীন ব্রিটিশবিরোধী সশস্ত্র আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন এবং নিজ জীবন দান করেন। শিক্ষকতার কারণে তিনি ‘মাস্টার দা’ উপাধি পান। তার সম্মানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদালয়ে আবাসিক হলের নামকরণ করা হয়। এ ছাড়া কলকাতা মেট্রো ও বাঁশদ্রোণী মেট্রো স্টেশনের নামকরণ করেছে মাস্টার দা সূর্য সেন মেট্রো স্টেশন। সূর্য সেন ১৮৯৪ সালের ২২ মার্চ চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯১২ সালে চট্টগ্রামের হরিশদত্ত ন্যাশনাল স্কুল থেকে প্রবেশিকা (এন্ট্রান্স), চট্টগ্রাম কলেজ থেকে এফ. এ. পরীক্ষায় পাস করেন। পরে একই কলেজে বি.এ ভর্তি হন। ১৯১৮ সালে তিনি বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজ থেকে বি.এ পাস করেন। মাস্টার দা ১৯১৬ সালে বি.এ পড়ার সময় তিনি বৈপ্লবিক আদর্শে দীক্ষিত হয়ে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯১৮ সালে ‘যুগান্তর’ দলের চট্টগ্রাম শাখার সঙ্গে এবং ১৯২৯ সালে চট্টগ্রাম জেলা কংগ্রেসের সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন তিনি। আত্মরক্ষার কৌশল হিসেবে তিনি ‘ন্যাশনাল স্কুল’-এ শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। মাস্টার দা ব্রিটিশ রাজত্ব অবসানের লক্ষ্যে চট্টগ্রামের বিপ্লবীদের সংগঠিত করেন। ১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল চট্টগ্রামের অস্ত্রাগার লুণ্ঠন ও সশস্ত্র বিদ্রোহের প্রধান সংগঠক সূর্য সেন। তারই নেতৃত্বে বিপ্লবীরা সেদিন দামপাড়ায় পুলিশ রিজার্ভ ব্যারাক দখল করে নেয় ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে। তারা কুচকাওয়াজ করে মাস্টার দা সূর্য সেনকে সংবর্ধনা দেয়। তিনি অস্থায়ী বিপ্লবী সরকার গঠনের ঘোষণা দেন। সেদিন থেকে চারদিন চট্টগ্রাম সম্পূর্ণ ব্রিটিশ শাসনমুক্ত ছিল। ইংরেজ সরকার তাকে ধরার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করে। ১৯৩২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাবে সফল আক্রমণ চালান; তবে তিনি গুলিবিদ্ধ হন এবং সায়ানাইড খেয়ে আত্মহত্যা করেন। এ ঘটনার পর মাস্টার দা আত্মগোপন করেন। ১৯৩৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি তিনি তার সঙ্গীসহ ধরা পড়েন। বিচারে ব্রিটিশ সরকার তাকে প্রাণদণ্ডে দণ্ডিত করেন। দণ্ড কার্যকর করার আগে ব্রিটিশ সেনারা সূর্য সেন এবং তারকেশ্বর দস্তিদারের ওপর নির্মমভাবে অত্যাচার করে। এরপর তাদের অর্ধমৃতদেহ দুটি ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেয়া হয়। মৃত সূর্য সেন ও তারকেশ্বর দস্তিদারের লাশ আত্মীয়দের হাতে হস্তান্তর না করে, মৃতদেহের বুকে লোহার টুকরা বেঁধে বঙ্গোপসাগর আর ভারত মহাসাগরের সংলগ্ন একটা জায়গায় ফেলে দেয়া হয়।
কাজী সালমা সুলতানা