স্মরণীয়-বরণীয়

ভাষা আন্দোলনের প্রথম ভাষাসৈনিক, আইনজীবী ও সমাজকর্মী রাজনীতিবিদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। ১৯৪৮ সালে রাজনীতিবিদদের মধ্যে সর্বপ্রথম যে নির্ভীক ব্যক্তিত্ব করাচিতে পাকিস্তান গণপরিষদে দাঁড়িয়ে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে সোচ্চার হয়েছিলেন, তিনি কুমিল্লার কৃতী সন্তান ও ’৭১-এর শহিদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। তিনি ১৯৪৮ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি উর্দু ও ইংরেজির পাশাপাশি বাংলাকে পাকিস্তান গণপরিষদে কার্যবিবরণীর ভাষার মর্যাদাদানের প্রস্তাবের মধ্য দিয়ে ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত করেন। ভাষা আন্দোলনের সময়জুড়ে গণপরিষদের ভেতরে ও বাইরে তিনি বাংলা ভাষার পক্ষে জোরালো ভূমিকা রাখেন। ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ১৮৮৬ সালের ২ নভেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রামরাইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯০৪ সালে নবীনগর হাই স্কুল থেকে প্রবেশিকা, ১৯০৮ সালে কলকাতা রিপন কলেজ থেকে বিএ এবং ১৯১০ সালে একই কলেজ থেকে বিএল পরীক্ষায় পাস করেন। তিনি প্রায় এক বছরকাল কুমিল্লার মুরাদনগর বাঙ্গুরা উমালোচন হাই স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক ছিলেন। ১৯১১ সালে তিনি কুমিল্লা জেলা বারে যোগদান করেন। ১৯৩৬ সালে ত্রিপুরা (বর্তমানে কুমিল্লা) জেলা বোর্ডের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষের সময় ত্রাণসামগ্রী বিতরণে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলন, ১৯২০ সালে অসহযোগ আন্দোলন এবং ১৯৪২ সালে ভারত ছাড় আন্দোলনে যোগ দেন। ১৯৩৭ সালে তিনি বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৫৬ থেকে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত তিনি পূর্ব পাকিস্তানের স্বাস্থ্য ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন । ১৯৬০ সালে পাকিস্তান সরকার তার ওপর ÔGe‡WvÕ (Elective Bodies Disqualification Order) প্রয়োগ করে। ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় তিনি গৃহবন্দি হন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ২৯ মার্চ রাতে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ও তার ছেলে দিলীপকুমার দত্তকে ধরে নিয়ে যায় এবং ময়নামতি সেনানিবাসে নিয়ে নির্মমভাবে অত্যাচার করে হত্যা করে। বাংলাদেশ সরকার ১৯৯৭ সালে তাকে ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ প্রদান করে।

কাজী সালমা সুলতানা

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০