উপমহাদেশের শাস্ত্রীয় সংগীতের আরেক দিকপাল, প্রখ্যাত উচ্চাঙ্গ সংগীতশিল্পী, সুরসাধক ওস্তাদ মোহাম্মদ হোসেন খসরু। সাধারণ মানুষের কাছে তিনি ‘খুশু মিয়া’ নামে পরিচিত ছিলেন। ওস্তাদ মোহাম্মদ হোসেন খসরুর জন্ম ১৯০৩ সালের ২ এপ্রিল কুমিল্লা শহরে প্রসিদ্ধ দারোগা বাড়িতে। তার পিতৃনিবাস ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা থানার মঈনপুর গ্রামে। পিতা জাইদুল হোসেন ছিলেন একজন বংশীবাদক। মোহাম্মদ হোসেন খসরু ১৯১৮ সালে এন্ট্রান্স, ১৯২৩ সালে বিএ ও ১৯২৪ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করে প্রাদেশিক সমবায় বিভাগে চাকরিতে যোগদান করেন। সংগীত সাধনা ও গানের জলসা নিয়ে অধিক মনোযোগী থাকায় চাকরিতে তার তেমন উন্নতি হয়নি। সেই সময় কলকাতার বিখ্যাত সংগীতজ্ঞ আমিরুল ইসলাম শকীর সঙ্গে তার পরিচয় হয়। মোহাম্মদ হোসেন খসরু ১৯২৮ সালে লক্ষেèৗ যান। তিনি সেখানে সেরা ওস্তাদদের কাছে ঠুমরি, খেয়াল, যন্ত্রসংগীতে-তবলা, সেতার, এস াজ শিক্ষা করেন। এ সময় তার নাম পাল্টিয়ে আমীর খসরু নামকরণ করেন। তিনি লক্ষেèৗর প্রসিদ্ধ ‘মরিস কলেজ অব মিউজিক’-এর উপাধ্যক্ষ নিযুক্ত হন। এখানে থাকাকালে কণ্ঠসংগীত ও যন্ত্রসংগীতে প্রশিক্ষণের পাঠ্যসূচিতে পরিবর্তন আনেন। দেশে ফিরে এলে বিশিষ্ট ওস্তাদ হিসেবে তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। সুরসম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর সঙ্গেও তার আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তিনি বাংলা, উর্দু ও হিন্দিতে বহু উচ্চাঙ্গসংগীত রচনা করেন। ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ তাকে ‘দেশমণি’ আখ্যা দেন। তিনি খেয়াল ও ঠুংরি গায়ক হিসেবে তিনি খ্যাতি লাভ করেন। তিনি রবীন্দ্রসংগীতেও পারদর্শী ছিলেন। ১৯৫৬ সালে তিনি বুলবুল একাডেমির অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন। ১৯২২ সালে কবি কাজী নজরুল ইসলামের পরিচয় হয় ওস্তাদ হোসেন খসরুর সঙ্গে। ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে প্রগাঢ় বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। ড. কাজী মোতাহার হোসেন তার কাছে গান শিখেন। গজল গানেও তিনি দক্ষ ছিলেন। যন্ত্রসংগীত বিশেষত তবলা ও সেতারে তিনি উচ্চমানের পারদর্শিতা লাভ করেন। তবলার বোল এবং নৃত্যের বোল ও ভাও তিনি সৃষ্টি করেন। জীবনের শেষ দিকে মোহাম্মদ খসরু স্বল্পকালের জন্য ঢাকার বুলবুল ললিতকলা একাডেমিতে ছিলেন। পাকিস্তান সরকার ১৯৬২ সালে তাকে মরণোত্তর ‘প্রাইড অব পারফরম্যান্স’ উপাধি এবং বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৮ সালে মরণোত্তর ‘শিল্পকলা একাডেমি পদক’ প্রদান করে। ১৯৫৯ সালের ৬ আগস্ট তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা