বাংলাদেশের শিল্পায়নের পথপ্রদর্শক, আইনশাস্ত্রজ্ঞ, রাজনৈতিক নেতা ও শিল্পপতি আবুল কাসেম খান (এ কে খান)। স্বাধীনতার আগে যে কজন বাঙালি ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা তাদের অবস্থান শক্ত করতে পেরেছিলেন, তাদের মধ্যে সবার ওপরেই ছিলেন আবুল কাসেম খান, যিনি এ কে খান নামে বেশি পরিচিত। তিনি পূর্ববঙ্গের মুসলমানদের মধ্যে প্রথম প্রতিষ্ঠিত শিল্পপতি। আবুল কাসেম খান ১৯০৫ সালের ৫ এপ্রিল চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ (বর্তমানে চাঁদগাঁও) থানার মোহরা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইংরেজিতে বিএ (সম্মান) ও এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৩৫ সালে তিনি বেঙ্গল সিভিল সার্ভিসে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় পাস করে মুনসেফ হিসেবে সরকারি চাকুরিতে যোগদান করেন। ১৯৪৪ সালে তিনি চাকরি থেকে পদত্যাগ করে ব্যবসা শুরু করেন । আবুল কাসেম খান তার মেধাশক্তি ও অভিজ্ঞতা দিয়ে ব্যবসায় নতুন সম্ভাবনার পথ উš§ুক্ত করেন। তিনি একে একে ম্যাচ ফ্যাক্টরি, প্লাইউড্ ফ্যাক্টরি, কটন টেক্সটাইল মিল, নৌচালন কোম্পানি, ডক্ইয়ার্ড ও ইঞ্জিনিয়ারিং ইত্যাদি ১২টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিতে পরিণত হন। ব্যবসায় সাফল্য অর্জনের পাশাপাশি তিনি রাজনীতিতেও ভূমিকা রাখেন। ১৯৪৬ সালে তিনি ভারতের পরিষদ সদস্য ও ভারত বিভাগের পর তিনি পাকিস্তান পরিষদ সদস্য হন। পাকিস্তান পরিষদ সদস্য হিসেবে তিনি পরিষদে বলেন-‘বাঙালিই হোক, বালুচই হোক, সিন্ধি বা পাঞ্জাবি যা-ই হোক দেশের প্রতিটি লোকের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা থাকতে হবে।’ ১৯৫৪ সালে তিনি কিছুদিনের জন্য রাজনীতি থেকে অবসর নেয়ে আবারও রাজনীতিতে ফিরে আসেন। তিনি ১৯৫৮ থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত শিল্প, পূর্ত, সেচ, বিদ্যুৎ ও খনিজ সম্পদমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬২ থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত তিনি পাকিস্তান গণপরিষদের বিরোধীদলীয় সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধের পর তিনি রাজনীতি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। আবুল কাসেম খান শিল্পপতি ও রাজনীতিবিদ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একজন দানশীল ও জনহিতৈষী ব্যক্তিও ছিলেন। তিনি বলতেন ‘ছোট-বড় সবাইকে শ্রদ্ধা করতে হবে, মনোযোগ দিয়ে মানুষের কথা শুনতে হবে, অপ্রয়োজনীয় খরচ করা যাবে না এবং কোনোভাবেই অর্থের অহংকার করা যাবে না’। তার মৃত্যুর আগে তিনি তার ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মুনাফার শতকরা ৩০ ভাগ ধর্মীয়কাজ, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার প্রসারে দান করে যান। তিনি ১৯৯১ সালের ৩১ মার্চ মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা
