স্মরণীয়-বরণীয়

লোকগানের প্রখ্যাত শিল্পী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ইন্দ্রমোহন রাজবংশী। ইন্দ্রমোহন রাজবংশী ১৯৪৬ সালের ২৬ জানুয়ারি ঢাকা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পরিবার পাঁচ পুরুষ ধরে সংগীতের সঙ্গে জড়িত। তার পিতামহ কৃষ্ণ দাস রাজবংশীযাত্রা, পালাগান, নজরুলগীতি ও লোকগান করতেন। ১৯৫০-এর দশকের শুরুতে তিনি তার পিতামহের কাছে সংগীত শিখতে শুরু করেন। পরে তিনি নজরুলগীতি চর্চার জন্য বুলবুল ললিতকলা একাডেমিতে ভর্তি হন এবং পাঁচ বছরের কোর্স শেষ করেন। ১৯৬৩ সালে তিনি হাফিজুর রহমানের কাছে লোকগান শিখতে শুরু করেন। ১৯৭১ সালে তিনি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে সংগীত পরিবেশন শুরু করেন। ১৯৭৪ সালে তিনি সরকারি সংগীত কলেজে যোগদান করেন। সেখানে তিনি লোকসংগীত বিভাগের প্রধান হিসেবে দীর্ঘদিন কর্মরত ছিলেন। ইন্দ্রমোহন রাজবংশী চলচ্চিত্র, বেতার, টেলিভিশন ইত্যাদিতে অনেক গান পরিবেশন করেন। ইন্দ্রমোহন রাজবংশী ১৯৬৭ সালে ‘চেনা অচেনা’ চলচ্চিত্রে গান গাওয়ার মধ্য দিয়ে; তিনি চলচ্চিত্রে নেপথ্য কণ্ঠ দেন। ১৯৯৮ সালে তিনি বাংলাদেশ লোকসংগীত পরিষদ নামে একটি লোকসংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। সংগঠনটি লোকগান অনুশীলন, সংরক্ষণ, প্রচার ও গবেষণার কাজ করে। তিনি শিশুদের জন্য প্রায় ১০০টি লোকগান লিখেছেন। ইন্দ্রমোহন রাজবংশী গান গাওয়ার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লোকগান সংগ্রহ করতেন। তিনি এক হাজারেরও বেশি কবির লেখা কয়েক লাখ গান তিনি সংগ্রহ করেছেন। ২০১৪ সালের মধ্যে তিনি নয়টি গানের অ্যালবাম প্রকাশ করেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে ইন্দ্রমোহন রাজবংশী যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য মনস্থির করেন। কিন্তু পাকিস্তানিদের হাতে ধরা পড়ে যাওয়ায় সম্মুখ যুদ্ধে তিনি যেতে পারেননি। সে সময় তিনি নিজের নাম পরিচয় গোপন করে পাকিস্তানিদের দোভাষী হিসেবে কিছুদিন কাজ করেন। পরে সুযোগ বুঝে সেখান থেকে চলে এসে মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণা দিতে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে সংগীত পরিবেশন শুরু করেন। সংগীতে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৮ সালে তিনি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার একুশে পদক লাভ করেন। ২০২১ সালের ৭ এপ্রিল তিনি মহামারি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।

কাজী সালমা সুলতানা

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০