বাঙালি জাতীয় সংগ্রাম ও উম্মেষের অধ্যায় থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতিটি অধ্যায়ের প্রথম কাতারের যোদ্ধা কাজী আরেফ আহমেদ। মহান মুক্তিযুদ্ধকে সংগঠিত করার ক্ষেত্রে যে ক’জন নেতা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন, তিনি তাদের একজন। কাজী আরেফ আহমেদ ১৯৪২ সালে ৮ এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক বাড়ি কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার আমলা ইউনিয়নে খয়েরপুর কচুবাড়ীয়া গ্রামে। ১৯৪৭ সালে বাবার চাকরি সূত্রে তিনি ঢাকার টিকাটুলীতে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। কিশোর বেলা থেকে নিয়মিত পড়াশোনার পাশাপাশি স্কাউটিং, খেলাধুলা এবং সাংস্কৃতিক র্কমকাণ্ডেও সমান মেধার স্বাক্ষর রাখেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগে এমএসসিতে শিক্ষার্থী অবস্থায় তিনি এদেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অবতীর্ণ হন। ১৯৬০ সালে হামিদুর রহামান শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে আন্দোলন ও এ সময়ে সংঘটিত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নেন তিনি। ১৯৬২ সালে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য গড়ে তোলা হয় গোপন সংগঠন ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ’। কাজী আরেফ আহমেদ ছিলেন এর নিউক্লিয়াসের প্রতিষ্ঠাতা তিন সদস্যের একজন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালে বাঙালির মুক্তির সনদ ছয় দফা ঘোষণা দিলে ছয় দফার সমর্থনে তার নেতৃত্বে ছাত্রলীগ প্রথম মিছিল করে। ১৯৭০ সালে গঠন করা হয় ‘জয় বাংলা বাহিনী। এর অন্যতম সংগঠক ছিলেন কাজী আরেফ আহমেদ। তিনি স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক জাতীয় পতাকার অন্যতম রূপকার। মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি দেরাদুনে মুক্তিযুদ্ধাদের প্রশিক্ষণ প্রদান করেন। তিনি বিএলএফ বা মুজিব বাহিনীর পশ্চিমাঞ্চলীয় সেক্টরের উপঅধিনায়ক ছিলেন। বিএলএফ বা মুজিব বাহিনীর ৪টি সেক্টরের সঙ্গে হাইকমান্ডের একজন হিসেবে সমন্বয়ের দায়িত্ব ও মুজিব বাহিনীর গোয়েন্দা শাখার প্রধান ছিলেন তিনি। ১৯৭২ সালে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন কাজী আরেফ আহমেদ। তিনি ‘দৈনিক গণকণ্ঠের’ ব্যবস্থাপনা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নৃশংসভাবে সপরিবারে হত্যার পর ১৯৭৮ সালে তিনি ১০ দলীয় ঐক্যজোট গড়ে তোলেন। ১৯৯০’র সামরিক স্বৈরাচারবিরোধী ছাত্রগণঅভ্যুত্থানেরও অন্যতম রূপকার ছিলেন তিনি। ১৯৮৭ সালের জুনে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ৯ মাস কারাভোগের পর তিনি মুক্তি পান। ১৯৯২ সালে তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে প্রতিষ্ঠা করেন ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন এবং একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল জাতীয় সমন্বয় কমিটি’। ১৯৯৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার কালিদাসপুরে এক জনসভা মঞ্চে সন্ত্রসীদের গুলিতে তিনি নিহত হন ।
কাজী সালমা সুলতানা