নারী মুক্তি আন্দোলনের অন্যতম নেত্রী, সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদ এবং সমাজসেবক শামসুন্নাহার মাহমুদ। নারী শিক্ষা প্রসার ও অবরোধপ্রথা রহিত করার জন্য যারা জীবন উৎসর্গ করেছিলেন তাদের মধ্যে তিনি উল্লেখযোগ্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হল এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন নাহার হল তার নামে নামকরণ করা হয়। শামসুন্নাহার ১৯০৮ সালের ১৯ অক্টোবর ফেনীর গুথুমা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯২৬ সালে ম্যাট্রিক, ১৯২৮ সালে আইএ ও ১৯৩২ সালে বিএ পাস করেন। এর ১০ বছর পর ১৯৪২ সালের তিনি এমএ পাস করেন। শামসুন নাহারের বি.এ (পাস) উপলক্ষে বেগম রোকেয়া এক সংবর্ধনার আয়োজন করেন। পড়াশোনা শেষ করে তিনি বেগম রোকেয়ার নেতৃত্বে নারী অধিকার আন্দোলনে যোগ দেন। শামসুন্নাহার লেডি ব্রাবোর্ন কলেজে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু করেন। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের সঙ্গে তার ও তার ভাই হাবীবুল্লাহ বাহারের খুব ভালো সম্পর্ক ছিল। নজরুল তার সিন্ধু-হিন্দোল কাব্য ‘বাহার-নাহার’কে উৎসর্গ করেন। তিনি নিয়মিত বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সম্মেলনে যোগ দিতেন। কিছুদিন নিখিল বঙ্গ মুসলিম মহিলা সমিতির সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫২ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তানের পক্ষ থেকে তুরস্ক ও মধ্যপ্রাচ্য সফর করেন। তিনি কলম্বোয় অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অব উইমেন দলের নেতৃত্ব দেন এবং গোটা এশিয়ার জন্য এর আঞ্চলিক ডিরেক্টর পদে নিয়োজিত হন। কাজের প্রয়োজনে তিনি বিভিন্ন সময়ে যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড, রোম, প্যারিস প্রভৃতি দেশ ও নগরী ভ্রমণ করেন। ১৯৬২ সালে তিনি পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। তারই প্রচেষ্টায় ১৯৬১ সালে পঙ্গু শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্র স্থাপিত হয়। শামসুন্নাহার কলকাতা থাকাকালে বিদ্রোহী কবি কর্তৃক অনুপ্রাণিত হয়ে লেখা শুরু করেন। তিনি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্নেহধন্য। কবিকে নিয়ে লেখা তার সুবিখ্যাত গ্রন্থ ‘নজরুলকে যেমন দেখেছি’। শামসুন্নাহার মাহমুদ তার প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় আঙ্গুর পত্রিকায়। তিনি নওরোজ ও আত্মশক্তি পত্রিকার নারীবিষয়ক অংশের সম্পাদকের কাজ করেন। তার রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ পুণ্যময়ী, ফুলবাগিচা, বেগম মহল, রোকেয়া জীবনী শিশুর শিক্ষা, আমার দেখা তুরস্ক ইত্যাদি। ১৯৬৪ সালের ১০ এপ্রিল তিনি মৃত্যুবরণ করেন। শামসুন্নাহার মাহমুদ ১৯৮১ সালে স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার ১৯৯৬ বেগম রোকেয়া পদক লাভ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা