বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, লেখক, গরেষক লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য তিনি বীরপ্রতীক খেতাব লাভ করেন। ২০২১ সালে গণ-বিষয়ক ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখার জন্য ভারত সরকার কর্তৃক তিনি পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত হন। সাজ্জাদ আলী জহির ১৯৫১ সালের ১১ এপ্রিল কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি উপজেলার চৌসই গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৯ সালের শেষের দিকে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে ক্যাডেট হিসেবে যোগ দেন। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের কাকুল সামরিক অ্যাকাডেমিতে সিনিয়র ক্যাডেট হিসেবে তিনি প্রশিক্ষণরত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে আগস্ট মাসের শেষে তিনি পাকিস্তান থেকে পালিয়ে ভারতে এসে যুদ্ধে যোগ দেন। আগস্ট মাসে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ৭৮ ফিল্ড আর্টিলারি রেজিমেন্ট শিয়ালকোটে তিনি কমিশন লাভ করেন। কয়েক দিন পর সেখান থেকে পালিয়ে ভারতে যান। মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন সেপ্টেম্বর মাসে। সাজ্জাদ আলী জহির মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন সেপ্টেম্বর মাসে। এই সময় ভারত সরকার মুক্তিবাহিনীকে কয়েকটি ১০৫ এমএম গান (হাউইটজার) দেয়। তা দিয়ে মুক্তিবাহিনীর জন্য একটি ফিল্ড আর্টিলারি ব্যাটারি (গোলন্দাজ দল) গঠন করা হয়। এর নাম দেয়া হয় রওশন আরা (বা ২ ফিল্ড) ব্যাটারি। এই ব্যাটারিতে অন্তর্ভুক্ত হন সাজ্জাদ আলী জহির। তিনি সহ-অধিনায়ক ছিলেন। রওশন আরা ব্যাটারিতে ছিল ছয়টি গান। অক্টোবর মাস থেকে এই ব্যাটারি ১০৫ এমএম কামান দিয়ে বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে মুক্তিবাহিনীর জেড ফোর্সকে বিভিন্ন যুদ্ধে আর্টিলারি ফায়ার সাপোর্ট দিয়ে সহায়তা করে। সাজ্জাদ আলী জহিরের পরিচালনায় রওশন আরা ব্যাটারি কয়েকবার পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা অবস্থানে গোলাবর্ষণ করে। সঠিক নিশানায় গোলাবর্ষণ করার ক্ষেত্রে তিনি যথেষ্ট কৃতিত্ব ও দক্ষতা প্রদর্শন করেন। এর ফলে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে লেফটেন্যান্ট কর্নেল হিসেবে তিনি অবসরে যান। কাজী সাজ্জাদ আলী জহির মহান মুক্তিযুদ্ধে আর্টিলারি ব্যাটারি পরিচালনায় দক্ষতার জন্য বীরপ্রতীক উপাধিতে ভূষিত হন। এছাড়া ২০১৩ সালে তিনি স্বাধীনতা পদক ও ২০২১ সালে পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত হন। চাকরি জীবনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর লে. কর্নেল পদ থেকে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধ ও অন্যান্য বিষয়ে তিনি একাধিক গ্রন্থ রচনা করেছেন।
কাজী সালমা সুলতানা