প্রখ্যাত উপন্যাস ‘তিতাস একটি নদীর নাম’-এর রচয়িতা ঔপন্যাসিক ও সাংবাদিক অদ্বৈত মল্লবর্মণ। এই উপন্যাস লিখে তিনি বাংলা সাহিত্যের চিরস্মরণীয় ও অমর প্রতিভা হিসেবে বিশেষ স্বীকৃতি লাভ করেন। এ উপন্যাসে তিনি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও সুগভীর অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে তিতাস নদীর তীরবর্তী জেলেদের সংগ্রামী জীবনের বাস্তব চিত্র তুলে ধরেন। ১৯৭৩ সালে প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক ঋত্বিক ঘটকের পরিচালনায় উপন্যাসটি চলচ্চিত্রে রূপায়িত হয়। অদ্বৈত মল্লবর্মণ ১৯১৪ সালেন ১ জানুয়ারি বর্তমান ব্রাহ্মণবাড়িয়ার গোকর্ণঘাটে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৩৩ সালে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অন্নদা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাস করে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু পরে দারিদ্র্যের কারণে তার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৩৪ সালে জীবিকা নির্বাহের উদ্দেশ্যে তিনি কলকাতা গমন করেন। সেখানে মাসিক ‘ত্রিপুরা’ পত্রিকার সাংবাদিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি নবশক্তি, মাসিক মোহাম্মদী ও দৈনিক আজাদ পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেন। এছাড়া তিনি নবযুগ, কৃষক ও যুগান্তর পত্রিকায় সহকারী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৪৫ সালে বিখ্যাত দেশ পত্রিকার সহকারী সম্পাদক হিসেবে যোগ দিয়ে আমৃত্যু এ দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বিশ্বভারতীর প্রকাশনা শাখায়ও খণ্ডকালীন চাকরি করেন। কিশোর বয়সেই অদ্বৈত সাহিত্য লেখা শুরু করেন। তার লেখা গল্প, কবিতা ও প্রবন্ধ সুধী সমাজের প্রশংসা অর্জন করে। প্রখ্যাত সাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, বুদ্ধদেব বসু প্রমুখ সম্পাদিত ‘এক পয়সায় একটি’ শীর্ষক ধারাবাহিক লিখে তিনি পাঠকসমাজে বিশেষ পরিচিতি লাভ করেন। ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ উপন্যাস প্রথম ‘মাসিক মোহাম্মদী’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। তার লেখা উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ তিসি, নয়াবসত, রামধনু, দু রঙা প্রজাপতি, সাদা হাওয়া, দলবেঁধে, সাগরতীর্থে, রাঙামাটি প্রভৃতি। তিনি অনেক শিশুপাঠ্য কবিতাও রচনা করেন। তার রচিত আর্ভিং স্টোনের লাস্ট ফর লাইফের অনুবাদ ‘জীবনতৃষ্ণা’ দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। অদ্বৈতের জ্ঞানতৃষ্ণা
ছিল প্রবল। তাই উপার্জিত অর্থের বেশিরভাগই তিনি বই কেনায় খরচ করতেন। সাহিত্য, ধর্ম, দর্শন, শিল্পকলা প্রভৃতি বিষয়ে সহস্রাধিক বইয়ের সংগ্রহ ছিল তার। দুস্থ ও পরিচিত মানুষকেও তিনি প্রচুর অর্থসাহায্য দিতেন। ১৯৫১ সালের ১৬ এপ্রিল তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা