Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 4:23 am

স্মরণীয়-বরণীয়

শ্রীলঙ্কার বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও ষষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী সিরিমা রাতওয়াত ডায়াস বন্দরনায়েক  (সিরিমাভো বন্দরনায়েকে)। তিনি আধুনিক বিশ্বের প্রথম মহিলা সরকারপ্রধান। তিন দফায় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। স্বামী সলোমন বন্দরনায়েকের রাষ্ট্রনীতির সঙ্গে মিল রেখে সমাজতন্ত্রকে ভিত্তি করে তিনি শ্রীলঙ্কা রাষ্ট্র পরিচালনা করেন। সিরিমাভো বন্দরনায়েকে ১৯১৬ সালের ১৭ এপ্রিল প্রখ্যাত রাদালা পরিবারের জন্মগ্রহণ করেন। মাতামহ ছিলেন বহুভাষাবিদ। তার লাইব্রেরিতে ছোটবেলা থেকে শ্রীমাভোর অবাধ বিচরণ। এই লাইব্রেরির আলোই পরবর্তী জীবনে তাকে বিকাশিত হতে প্রেরণা দিয়েছিল। তার বাবা বার্নেস রাতওয়েতে ছিলেন রাজনীতিবিদ। শ্রীমাভো স্কুলজীবন সমাপ্ত করেন ক্যাথেলিক চার্চ পরিচালিত স্কুল সেন্ট বৃজেট কনভেন্ট থেকে। ১৯ বছর বয়সে স্কুল শেষ করে বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হন। ১৯৪০ সালে সলোমন ওয়েস্ট রিজওয়ে ডায়াসের সঙ্গে তিনি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯৫৬ সালের সাধারণ নির্বাচনে শ্রীলঙ্কা ফ্রিডম পার্টির হয়ে সলোমন বন্দরনায়েক সংখ্যা গরিষ্ঠ আসনে জয়লাভ করে প্রধানমন্ত্রী মনোনীত হন। কিন্তু সমাজতান্ত্রিক ও জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক ধারার পরিবর্তন ঘটায় তার সরকারের পতন ঘটে। ১৯৫৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর এক বৌদ্ধ সন্ন্যাসী কর্তৃক তিনি নিহত হন। তার হত্যাকাণ্ডের ফলে সরকারে শূন্যতা ও অস্থিরতার সৃষ্টি হয়। অস্থিতিশীল এ অবস্থায় সিরিমাভো অগ্রসর হন ফ্রিডম পার্টিকে নেতৃত্ব দিতে। এভাবেই তিনি রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রবেশ করেন। পরে শ্রীলংকা ফ্রিডম পার্টিকে তিনি দীর্ঘদিন নেতৃত্ব দেন। ১৯৬০ সালে এমপিডি জয়সা, জুনিয়র সিনেট থেকে পদত্যাগ করলে সিরিমাভো এসএলএফপির পক্ষ থেকে সিনেট সদস্য হন। ১৯৬০ সালের জুলাই নির্বাচনে দলকে নেতৃত্ব দিয়ে জয়লাভ করান। ১৯৬০ সালের ২১ জুলাই সিনেটর থেকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন তিনি। এর ফলে তিনি বিশ্বের প্রথম নির্বাচিত মহিলা প্রধানমন্ত্রী হন। ১৯৭০ সালে সিরিমাভো বন্দরনায়েকে দ্বিতীয় মেয়াদে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। এ পর্যায়ে তিনি দেশের সংবিধানসহ বিভিন্ন পর্যায়ে বেশ বড় ধরনের পরিবর্তন আনেন। সিলন থেকে দেশের নাম পরিবর্তন করে রাখেন শ্রীলংকা। ১৯৯৪ সালে তৃতীয়বার শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। প্রায় চল্লিশ বছর ধরে রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার পর ২০০০ সালের ১০ আগস্ট তিনি  রাজনীতি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ২০০০ সালের ১০ সেপ্টেম্বর  তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

কাজী সালমা সুলতানা