স্মরণীয়-বরণীয়

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মদানকারী শহিদ মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা কামাল। ১৯৭১ সালের ১৮ এপ্রিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় দরুইন গ্রামে পাকবাহিনীর সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে তিনি শহিদ হন। মুক্তিযুদ্ধে চরম সাহসিকতা আর অসামান্য বীরত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সামরিক সম্মান ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। মোস্তফা কামালের জন্ম  ১৯৪৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর ভোলার দৌলতখান উপজেলার পশ্চিম হাজীপুর গ্রামে। ২০ বছর বয়সে হঠাৎ একদিন তিনি বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশ হন। ১৯৬৮ সালে পাকিস্তানের চতুর্থ ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টে চাকরি চূড়ান্ত হওয়ার পর বাবা-মা তার সন্ধান পান। ১৯৬৭-এর ১৬ ডিসেম্বর তিনি সেনাবাহিনীতে চাকরি গ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈনিক। ১৯৭১-এর প্রথম দিকে চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টকে কুমিল্লা সেনানিবাস থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পাঠানো হয়। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর কয়েক দিন পর সিপাহি মোস্তফা কামাল অবৈতনিক ল্যান্সনায়েক হিসেবে পদোন্নতি পান। ১৯৭১ সালের ১৪ এপ্রিল পাকিস্তানিরা হেলিকপ্টার গানশিপ, নেভাল গানবোট ও বিমানযোগে ত্রিমুখী আক্রমণ চালায় মুক্তিবাহিনীর ৪ ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের প্রতিরক্ষা অবস্থানের ওপর। মোস্তফা কামাল তখন গঙ্গাসাগর প্রতিরক্ষা অবস্থানের দরুইন গ্রামে নিয়োজিত আলফা কোম্পানির ২নং প্লাটুনের একজন সেকশন কমান্ডার। পাকিস্তানি আক্রমণে প্লাটুনটির রেশনদ্রব্য নষ্ট হয়ে যায়। নতুন করে কোনো রেশন না পাওয়ায় সবাই দীর্ঘসময় ধরে অভুক্ত অবস্থায় ছিলেন। এ সময় মোস্তফা কামাল এলএমজি নিয়ে আখাউড়া রেলস্টেশনে গিয়ে মেজর শাফায়াত জামিলকে অনুরোধ করলে তিনি সেখানে রেশনের বন্দোবস্ত করেন। ১৭ এপ্রিল সকাল থেকে পাকিস্তানি বাহিনী তীব্র গোলাবর্ষণ শুরু করে প্লাটুন পজিশনের ওপরে। ১৮ এপ্রিল দুপুর ১২টার দিকে পাকসেনারা দরুইনকে ঘিরে ফেলে। সে সময় ল্যান্সনায়েক মোস্তফা কামাল সবাইকে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেন। সহযোদ্ধারা তাকেও পশ্চাদপসরণের অনুরোধ করেন। সহযোদ্ধাদের নিরাপদে সরিয়ে, পরিখা থেকে তিনি একাই অনবরত গুলি ছুড়তে লাগলেন। পাকিস্তানিরা মেশিনগান ও মর্টারের গোলাবর্ষণ করতে থাকে। একপর্যায়ে মোস্তফার এলএমজির গুলি নিঃশেষ হয়ে যায় এবং তিনি মারাত্মকভাবে জখম হন। তখন পাকিস্তান বাহিনীর সৈনিকরা তাকে বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার দরুইন গ্রামে তার শাহাদত স্থানের পাশেই গ্রামবাসী তাকে সমাহিত করেন।

কাজী সালমা সুলতানা

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০