প্রকৃতিবিদ ও বিবর্তনবাদের জনক জীববিজ্ঞানী চার্লস ডারউইন। তিনিই প্রথম প্রত্যক্ষ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে বিবর্তনবাদের ধারণা দেন। তিনিই সর্বপ্রথম অনুধাবন করেন, সব ধরনের প্রজাতিই কিছু সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে উদ্ভূত হয়েছে এবং তার এ পর্যবেক্ষণটি সাক্ষ্য-প্রমাণ দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন। তার জীবদ্দশাতেই বিবর্তনবাদ একটি তত্ত্ব হিসেবে বিজ্ঞানী সমাজ ও অধিকাংশ সাধারণ মানুষের কাছে স্বীকৃতি লাভ করে। পরিবর্তিত রূপে ডারউইনের বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার ছিল জীববিজ্ঞানের একত্রকরণ তত্ত্ব, যা জীববৈচিত্র্যের ব্যাখ্যা প্রদান করে।
চার্লস ডারউইন ১৮০৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি ইংল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৮৩১ সালে ‘হিজ ম্যাজেস্টিস সার্ভিস বিগল’ নামক জরিপ জাহাজে পাঁচ বছরের বৈজ্ঞানিক অভিযানে যোগ দেন। অভিযানকালে তিনি লিয়েলের ভূতত্ত্বের মূলনীতি অধ্যয়ন করেন। ১৮৩৬ সালে ইংল্যান্ডে ফিরে ডারউইন তার পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে প্রজাতির বিকাশের রহস্য উম্মোচনে সচেষ্ট হন। তিনি প্রাকৃতিক নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বিবর্তন তত্ত্বের প্রস্তাবনা উত্থাপন করেন। তার মতে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে টিকে থাকার প্রয়োজনীয় বৈশিষ্ট্যগুলো প্রদানের মাধ্যমে স্বীয় পরিবেশে সর্বাপেক্ষা যোগ্য প্রাণিকুল (বা উদ্ভিদকুলই) টিকে থাকবে এবং বংশবৃদ্ধি ও প্রজাতির পরিবর্তন সাধিত করবে। ডারউইন ২০ বছর তার তত্ত্বের ওপর গবেষণা করেন। ১৮৫৯ সালে ডারউইন প্রজাতির উদ্ভব প্রসঙ্গে ‘অন দ্য অরিজিন অব স্পেসিস (প্রজাতির উৎপত্তি)’ প্রকাশ করেন। এই বইটিকে জীবের উৎপত্তি ও বিকাশ-সংক্রান্ত গবেষণার ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তার মতে, মানুষ অন্যান্য প্রাণীর মতো এক ধরনের প্রাণী। মানুষের উদ্ভব সম্ভবত ‘এপস’ (লেজবিহীন বানর) থেকে, যা পৃথিবীর সৃষ্টি সম্পর্কিত প্রচলিত বিশ্বাসকে বিনাশ করে। সব ধরনের প্রজাতিই কিছু সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে উদ্ভূদ হয়েছে তার এই পর্যবেক্ষণটি সাক্ষ্য-প্রমাণ দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন। বিবর্তনের এই নানা শাখা-প্রশাখায় ভাগ হওয়ার বিন্যাসকে তিনি প্রাকৃতিক নির্বাচন হিসাবে অভিহিত করেন। তার অন্যান্য কাজের মধ্যে ‘দ্য এক্সপ্রেশন অব ইমোশনস ইন ম্যান অ্যান্ড এনিম্যালস (মানুষ ও প্রাণীর আবেগীয় অভিব্যক্তি)’, ‘দ্য ডিসেন্ট অব ম্যান, অ্যান্ড সিলেকশন ইন রিলেশন টু সেক্স (মানুষের ক্রমোন্নয়ন ও লৈঙ্গিক নির্বাচন)’, ‘দ্য পাওয়ার অব মুভমেন্ট ইন প্ল্যান্টস’ এবং ‘দ্য ফর্মেশন অব ভেজেটেবল মৌল্ড থ্রু দ্য অ্যাকশন অব ওয়ার্মস’। আজীবন বিজ্ঞান সাধনার পর ১৮৮২ সালের ১৯ এপ্রিল তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা