লেখক, মানব কম্পিউটার শকুন্তলা দেবী। বিশাল বিশাল অঙ্কগুলোর উত্তর বের করতে কয়েক সেকেন্ড সময় নিতেন! তার এই অসাধারণ গণন-ক্ষমতার জন্য তাকে ১৯৮২ সালে ‘গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস’-এ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আর সেই সঙ্গে ‘বিশ্বের দ্রুততম মানব কম্পিউটার’ হওয়ার খেতাব পান তিনি। শকুন্তলা দেবী ১৯২৯ সালের ৪ নভেম্বর ভারতের ব্যাঙ্গালুরুতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি অসাধারণ স্মরণশক্তি ও সংখ্যা-গণনার দক্ষ ছিলেন। মাত্র তিন বছর বয়সে তিনি তাসের বিভিন্ন খেলা রপ্ত করেন। তার বাবা ছিলেন একটি সার্কাসের দলে। তিনি দল ছেড়ে মেয়েকে নিয়ে বিভিন্ন ‘রোড শো’ শুরু করেন। ছয় বছর বয়সে তিনি মাইসোর বিশ্ববিদ্যালয়ে অসাধারণ এই দক্ষতার প্রদর্শনী করেন। ১৯৪৪ সালে তিনি পিতার সাথে লন্ডন চলে আসেন। এরপর ১৯৬০-এর মাঝামাঝি সময়ে তিনি ভারতে চলে আসেন। তিনি কোনো প্রথাগত শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার সুযোগ পাননি। শকুন্তলা দেবীর দ্রুত গণনার অসাধারণ ক্ষমতা প্রকাশ পেলে সমস্ত বিশ্বব্যাপী তার প্রদর্শনী শুরু হয়। ১৯৫০ সালে ইউরোপে, ১৯৭৬ সালে নিউইয়র্কে তার প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৭৭ সালে আমেরিকার ডালাসে প্রথমবার তিনি কম্পিউটারের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করেন। ১৮৮১৩৮৫১৭ সংখ্যাটির ঘনমূল তাকে এবং একটি কম্পিউটারকে বের করতে বলা হয়। তিনি কম্পিউটারের আগে ফল বের করে ফেলেন। ১৯৮০ সালের জুন মাসে লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজের কম্পিউটার সায়েন্স ডিপার্টমেন্ট তার পরীক্ষা নেয়। কম্পিউটার দৈবচয়ন পদ্ধতিতে ১৩ অঙ্কের দুটি সংখ্যা তৈরি করে শকুন্তলাকে সংখ্যা দুটি গুণ করতে বলে। তিনি কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে উত্তর বলা শুরু করেন। ১৯৮৮ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক আর্থার জেসন শকুন্তলা দেবীর ওপর গবেষণা করেন। তিনি তার মানসিক দক্ষতার ওপর বেশ কিছু পরীক্ষা করেন। জেসন ১৯৯০ সালে তার একাডেমিক জার্নালে লেখেন, ৬১, ৬২৯, ৮৭৫ এর ৩ বর্গমূল এবং ১৭০, ৮৫৯, ৩৭৫-এর ৭ বর্গমূল করতে দিলে শকুন্তলা দেবী জেসনের নোটবুকে লেখার আগেই এগুলোর উত্তর ৩৯৫ ও ১৫ বলে দেন। শকুন্তলা দেবী লেখক হিসেবে বেশ কিছু উপন্যাস, গণিত, ধাঁধা ও জ্যোতির্বিজ্ঞানের বই রচনা করেন। ২০১৩ সালের ২১ এপ্র্রিল তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা