Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 6:23 pm

স্মরণীয়-বরণীয়

প্রথাবিরোধী ও বহুমাত্রিক মননশীল লেখক গবেষক, ভাষাবিজ্ঞানী হুমায়ুন আজাদের আজ ৮০তম জন্মবার্ষিকী। তিনি তার লেখায় সমাজ, রাজনীতি ও রাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে মতামত প্রকাশ করেন। তার সাহিত্যের বৈশিষ্ট্য প্রেম, প্রগতিবাদিতা ও ধর্মনিরপেক্ষতা, সামরিক শাসন ও একনায়কতন্ত্রের বিরোধিতা এবং নারীবাদ। ২০০৪  সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি তিনি ঘাতকদের দ্বারা আক্রমণের শিকার হন। হুমায়ুন আজাদ ১৯৪৭ সালের ২৮ এপ্রিল বিক্রমপুরের রাড়িখালে জন্মগ্রহণ করেন। তার পূর্ব নাম হুমায়ুন কবির। তিনি রাড়িখাল স্যার জগদীশচন্দ্র বসু ইনস্টিটিউশন থেকে মাধ্যমিক (১৯৬২), ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে অনার্সসহ স্নাতক (১৯৬৭) ও স্নাতকোত্তর (১৯৬৮) ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬৯ সালে তিনি চট্টগ্রাম কলেজে প্রভাষক হিসেবে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৭০ সালে তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন। ১৯৭৩ সালে তার প্রথম গবেষণা গ্রন্থ রবীন্দ্র প্রবন্ধ: রাষ্ট্র ও সমাজচিন্তা এবং কাব্যগ্রন্থ অলৌকিক ইস্টিমার প্রকাশিত হয়। সে বছরে তিনি কমনওয়েলথ বৃত্তি নিয়ে ভাষাবিজ্ঞান পড়তে স্কটল্যান্ডে চলে যান। ১৯৭৬ সালে তিনি পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৭৮ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং ১৯৮৬ সালে অধ্যাপক পদে উন্নীত হন। ১৯৭৩ সালের দিকে তিনি ভাষা বিজ্ঞানচর্চার পাশাপাশি কবিতা লেখাতেও মনোযোগ দেন। হুমায়ুন আজাদের প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ৬০টির বেশি। তার মধ্যে ১০টি কাব্যগ্রন্থ, ১৩টি উপন্যাস, ২২টি সমালোচনা গ্রন্থ, ৮টি কিশোরসাহিত্য, ৭টি ভাষা বিজ্ঞানবিষয়ক। তার প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে  নারী, প্রবচনগুচ্ছ, আমরা কি এই বাংলাদেশ চেয়েছিলাম, ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল, সবকিছু ভেঙে পড়ে,  সবকিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে, পাক সার জমিন সাদ বাদ উল্লেখযোগ্য। শিশু-কিশোরদের জন্য লিখেছেন লাল নীল দীপাবলি, ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না, আব্বুকে মনে পড়ে, বুক পকেটে জোনাকি পোকা, আমাদের শহরে একদল দেবদূত প্রভৃতি। হুমায়ুন আজাদ ১৯৮৬ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার এবং ২০১২ সালে মরণোত্তর একুশে পদক অর্জন করেন। ২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রæয়ারি বাংলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত বইমেলা থেকে বাসায় যাওয়ার পথে ঘাতকদের আক্রমণের শিকার হন। কিছুটা সুস্থ হলে তিনি ‘কবি হাইনরিশ হাইনের জীবনী ও তার কবিতার বাংলা অনুবাদ’ বিষয়ে গবেষণার জন্য ফিলোশিপ নিয়ে জার্মানি যান। সেখানে মিউনিখ শহরে ২০০৪ সালের ১২ আগস্ট তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

কাজী সালমা সুলতানা