স্মরণীয়-বরণীয়

বাংলাদেশের খ্যাতিমান উপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, কবি, নাট্যকার, গবেষক ও অধ্যাপক আলাউদ্দিন আল আজাদের আজ ৯০তম জন্মদিন। তিনি  বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। তার প্রথম উপন্যাস তেইশ নম্বর তৈলচিত্র ১৯৬০ সালে  ছাপা হয়। আলাউদ্দিন আল আজাদ ১৯৩২ সালের ৬ মে নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার রামনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি নারায়ণপুর শরাফতউল্লাহ উচ্চবিদ্যালয় থেকে প্রবেশিকা, ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অনার্সসহ স্নাতক (১৯৫৩) ও স্নাতকোত্তর (১৯৫৪) এবং লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের জীবন ও কবিতা বিষয়ে গবেষণা করে পিএইচডি ডিগ্রি (১৯৭০) লাভ করেন। পরে অরগান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তুলনামূলক সাহিত্যে উচ্চ প্রশিক্ষণ (১৯৮৩) গ্রহণ করেন। আলাউদ্দিন আল আজাদ ছাত্রাবস্থাতেই ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। পাকিস্তানের প্রগতিশীল ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ততা তাকে সাহিত্যচর্চায় অনুপ্রাণিত করে। দেশ বিভাগের পরে তিনি দেশের চলমান প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হন। তিনি ছাত্রাবস্থায় সংবাদপত্রে খণ্ডকালীন চাকরির মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। পরে অধ্যয়ন শেষ করে শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত হন। তিনি নারায়ণগঞ্জের তোলারাম কলেজ, ঢাকা জগন্নাথ কলেজ, সিলেট এমসি কলেজ এবং চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ এ অধ্যাপনা করেন। ১৯৭৪-৭৫ সালে তিনি ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। আলাউদ্দিন আল আজাদ ভাষা আন্দোলনের গণমুখী ও স্বদেশপ্রেমী সাহিত্যধারার লেখক ছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধিকার আন্দোলনের সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ তাকে প্রেরণাদীপ্ত দায়িত্ববান শিল্পীর ভ‚মিকা গ্রহণে উজ্জীবিত করে। মানুষ ও সমাজ ছিল তার সাহিত্য ভাবনার কেন্দ্রবিন্দু। আদর্শবোধ ও প্রগতিশীলতা তার সৃষ্ট সাহিত্যে ব্যঙ্গময় রূপ লাভ করেছে। তার রচিত গ্রন্থের মধ্যে আঠারোটি উপন্যাস, সাতটি গল্পকাব্য গ্রন্থ ও ৩টি নাটক। এছাড়া শিল্পের সাধনা রচনাবলি ও স্বাধীনতা যুদ্ধেও ওপর লেখা: ফেরারী ডায়রী। ষাটের দশকে রচিত তার উপন্যাস তেইশ নম্বর তৈলচিত্র ও কর্ণফুলী ব্যাপক সাড়া জাগায়। তেইশ নম্বর তৈলচিত্র উপন্যাস অবলম্বনে প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক সুভাষ দত্ত ‘বসুন্ধরা’ চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। চলচ্চিত্রটি দেশে-বিদেশে ব্যাপক প্রশংসিত হয়। সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি বিপুলসংখ্যক পুরস্কারে ভ‚ষিত হন। তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার, ইউনেস্কো পুরস্কার, জাতীয় চলচিত্র পুরস্কার, একুশে পদক, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ স্বর্ণপদক অর্জন করেন। তিনি ২০০৯ সালের ৩ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন।

কাজী সালমা সুলতানা

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০