রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব কলিম শরাফী। তিনি ১৯২৪ সালের এদিনে জন্ম নেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বীরভ‚ম জেলায়। তার পুরো নাম মাখদুমজাদা শাহ সৈয়দ কলিম আহমেদ শরাফী। ১৯৪২ সালে কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসায় পড়ার সময় তিনি ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে ১৫ মাস কারাবরণ করেন। তিনি ছিলেন তৎকালীন ‘ভারত ছাড়’ আন্দোলনের অন্যতম কর্মী। কারামুক্ত হওয়ার পর তিনি গণসংগীত শিখতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। ১৯৪৩ সালে ভারতীয় গণনাট্য সংঘে যোগদান করেন এবং নাটকেও অভিনয় করেন। ১৯৪৪ সালে তিনি কৃষ্ণনাথ কলেজে এবং ১৯৪৫ সালে তিনি ক্যাপিটাল মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। গণনাট্য সংঘের কাজে মেতে ওঠার কারণে তার ডাক্তারি পড়ার অবসান ঘটে। সে সময় তিনি উত্তর কলকাতার প্রগতিশীল সংস্কৃতি ধারার নেতা সুধি প্রধানের ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে আসেন। এইচএমভি থেকে বের হয় তার গণসংগীতের প্রথম রেকর্ড। ১৯৪৭ সালে তিনি সংগীত বিদ্যালয় ‘দক্ষিণী’তে যোগদান করেন। ১৯৪৬-এর দাঙ্গার প্রথম দিকে গণসংগীত গাইলেও পরে কলিম শরাফী রবীন্দ্রসংগীত চর্চার দিকেই বেশি মনোনিবেশ করেন। তিনি গণসংগীত, রবীন্দ্রসংগীত ছাড়াও কলকাতা বেতার, বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন, চলচ্চিত্রে সংগীত পরিবেশন ছাড়াও এবং চলচ্চিত্র পরিচালক, সংগীত পরিচালনা করেছেন। তিনি সাস্কৃতিক সংগঠন প্রান্তিক, হ-য-ব-র-ল, সংগীত ভবন প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ‘সংগীত ভবন’ এবং বাংলাদেশ রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থার তিনি সভাপতি ছিলেন। নিজেকে সবসময় সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত রাখেন। ১৯৫৮ সালে পাকিস্তান সরকার তার গান রেডিওতে সম্প্রচার নিষিদ্ধ করে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা বহাল ছিল। তার নির্মিত প্রামাণ্য চিত্র ‘ভেনিস’ আন্তর্জাতিক পুরস্কার অর্জন করে। এছাড়া শিল্পকলা একাডেমি কাউন্সিল ও শিশু একাডেমি, বাংলাদেশ বেতার টিভি শিল্পী সংস্থা ও নাগরিক নাট্য অঙ্গনও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। আহমেদ শরাফী ৯০ এর দশকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের শিল্পী-সংস্কৃতিকর্মীদের সংগঠিত করার কাজ করেন। যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবিতে গণ-আদালতে সম্পৃক্ত হওয়ায় ১৯৯১ সালে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় এবং ১৯৯৫ সালের ২৫ মার্চ ঘাতক-দালালবিরোধী গণসমাবেশে অংশগ্রহণ করায় দেশের ২৪ বরেণ্য ব্যক্তির সঙ্গে তাকেও মামলার আসামি করা হয়। তার প্রকাশিত অ্যালবামের সংখ্যা ১৮টি; ১৫টি ক্যাসেট, ৩টি সিডি। তিনি একুশে পদক, স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার, রবীন্দ্র পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা অর্জন করেন। ২০১০ সালের ২ নভেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা