কবি, সাহিত্যিক, বিশিষ্ট চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব, উর্দু সাহিত্যের শীর্ষস্থানীয় কবি এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়কার বন্ধু কাইফি আজমি। তার পুরো নাম ছিল সাইয়িদ আখতার হুসেইন রিজভি। তিনি ১৯১৯ সালের ১৪ জানুয়ারি ভারতের উত্তর প্রদেশের আজমগড়ের মিজওয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ছেলেবেলা থেকে তার গজল লেখার সাধনা। মাত্র ১১ বছর বয়সে তিনি প্রথম গজল রচনা করেন। তিনি ছাত্রজীবনে উর্দু ও ফার্সি সাহিত্যে লেখাপড়া করেন। কিন্তু ১৯৪২ সালে ‘ভারত ছাড়’ আন্দোলনের সময় তিনি লেখাপড়া ছেড়ে দেন। কাইফি আজমি ১৯৪৩ সালে ভারতীয় কম্যুনিস্ট পার্টিতে যোগদান করেন। তিনি কমিউনিস্ট মুখপত্র উর্দু ‘কওমিজংয়ে’ নিয়মিত লিখতেন। পরে তিনি মুম্বাই শহরে চলে আসেন। কাইফি আজমি গজল দিয়ে কাব্যচর্চা শুরু করেন। ১৯৫২ সালে তিনি প্রথম চলচ্চিত্রের জন্য গান রচনা করেন। এর পর থেকে অসংখ্য ছবিতে তিনি গান রচনা করেন। তিনি হয়ে ওঠেন অন্যতম একজন গীতিকার। কাইফি আজমি চলচ্চিত্রের সংলাপও রচনা করেন। ‘হির রানঝা’ চলচ্চিত্রের সব সংলাপ কবিতার ছন্দে তিনি নিজে লিখে ইতিহাস তৈরি করেন । তিনি হিন্দি ছায়াছবির জন্য গান রচনা করেছেন আড়াই হাজারের ওপরে। তার কাব্যগ্রন্থের মধ্যে আখির-ই-সাব, শারমায়া, আওয়ারা সাজদে, কৈফিয়াত প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। তিনি শ্রেণিবিভেদ ও সামাজিক সচেতনতার পক্ষে লিখেছেন অসংখ্য কবিতা। নারী অধিকারের পক্ষে ও ধর্মীয় উগ্রতার বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতায় অসংখ্য কবিতা লিখেছেন। ‘আউরত’, ‘মকান’, ‘বহুরূপনী’, ‘দাইরা’ প্রভৃতি তার উল্লেখযোগ্য রচনা। উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে আখিরে-শব, আওয়ারা সাজদে, মেরি আওয়াজ শুনো, ইবলিস কি মজলিস-এ-শোরি প্রভৃতি। আরও রচনা করেন আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘ম্যায় আউর মেরি শায়েরি’। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় কাইফি আজমি একজন প্রথিতযশা কবি ও সিনেমা ব্যক্তিত্ব। সেসময় বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানিদের নির্যাতন কাইফি আজমিকে ব্যথিত করে। তিনি কবিতার মাধ্যমে তার অনুভ‚তি তুলে ধরেন। কাইফি আজমি কবিতা ও গান রচনার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধকালে বিশ্বজনমত গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখেন। বাংলাদেশে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নৃশংস গণহত্যার বিরুদ্ধে তিনি ‘বাংলাদেশ’ শিরোনামে একটি কবিতা লেখেন। তার এই অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে তাকে ‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’ দেয়া হয়। কাইফি আজমি কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ জীবনে দেশ-বিদেশের নানা সম্মান অর্জন করেন। তিনি ভারত সরকার কর্তৃক পদ্মশ্রী পদক, সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার, সাহিত্য একাডেমি ফেলোশিপসহ অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেন। তিনি বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক সাম্মানিক ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ২০০২ সালের ১০ মে মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা