Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 6:24 pm

স্মরণীয়-বরণীয়

প্রখ্যাত রবীন্দ্র সংগীতশিল্পী, সুরকার ও সংগীত পরিচালক আবদুল আহাদ। এদেশে রবীন্দ্রসংগীত প্রচার ও চর্চায় তিনিই প্রথম উদ্যোগী হন। শুধু তা-ই নয়, তিনি এদেশের আধুনিক ও দেশাত্মবোধক সংগীতের প্রধান পথিকৃৎ। আবদুল আহাদ ১৯১৮ সালের ১৯ জানুয়ারি রাজশাহীতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস ছিল ফরিদপুরর ভাঙ্গা উপজেলার ফুকুরহাটি গ্রামে। তবে তার শৈশব ও কৈশোর কেটেছে পাবনায়। শৈশবে পারিবারিক সাংস্কৃতিক আবহে লালিত-পালিত হওয়ায় তিনি সাহিত্য ও সংগীতের প্রতি অনুরক্ত হয়ে ওঠেন। ১৯৩৪ সালে কলকাতা সিটি কলেজে অধ্যয়নকালে তিনি উচ্চাঙ্গসংগীতে তালিম নেন। সে সময় তিনি কলকাতা বেতারে সংগীত পরিবেশনের জন্য মনোনীত হন এবং বাংলা ঠুংরি পরিবেশন করেন। ১৯৩৬ সালে অল বেঙ্গল সংগীত প্রতিযোগিতায় ঠুংরি ও গজল প্রতিযোগিতায় তিনি প্রথম স্থান অধিকার করেন। ১৯৩৮ সালে তিনি সরকারি বৃত্তি নিয়ে রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতনে ভর্তি হন। এই সময় কবিগুরুর পরম সান্নিধ্য লাভের সৌভাগ্য হয় তার। শান্তিনিকেতনে চার বছর অধ্যয়ন শেষে ১৯৪১ সালে তিনি কলকাতার এইচএমভি কোম্পানিতে সংগীত প্রশিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। আবদুল আহাদ ছায়াছবির সংগীত পরিচালক হিসেবেও বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর আবদুল আহাদ ঢাকায় চলে আসেন এবং ঢাকা বেতার কেন্দ্রে সুরকার ও প্রযোজক হিসেবে যোগদান করেন। বাংলাদেশ টেলিভিশনের সংগীতানুষ্ঠানে সুরকার হিসেবে তিনি নিয়মিত অংশগ্রহণ করতেন। উর্দু গজল ও গীত এবং বাংলাসহ এক হাজারের বেশি গানে তিনি সুরারোপ করেন। তিনি তার সংগীতদল নিয়ে স্পেন, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ বহু দেশ সফর করেন এবং সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে খ্যাতি অর্জন করেন। স্পেন সরকারের বৃত্তি নিয়ে তিনি মাদ্রিদে এক বছর পাশ্চাত্য সংগীতচর্চা করেন। আবদুল আহাদ লেখক হিসেবেও সুপরিচিত হন। তার লেখা ‘গণচীনে ২৪ দিন’, গানের স্বরলিপির বই ও আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘আসা-যাওয়ার পথের ধারে’ উল্লেখযোগ্য। জীবনের প্রায় শেষ পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ বেতারে প্রযোজক ও সুরকার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বয়সসীমা শেষ হওয়ার পরও সাতবার তার চাকরির মেয়াদ বাড়ানো হয়। আবদুল আহাদ সংগীতে অবদানের জন্য একাধিকবার রাষ্ট্রীয় সম্মানে ভূষিত হন। পাকিস্তান সরকার তাকে ১৯৬২ সালে তমঘা-ই-ইমতিয়াজ, ১৯৬৯ সালে সিতারা-ই-ইমতিয়াজ এবং বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৮ সালে স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার প্রদান করে। ১৯৯৪ সালের ১৫ মে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

কাজী সালমা সুলতানা