অবিভক্ত বাংলার একজন বিদ্যোৎসাহী, নাট্যামোদি, শিল্পকলাপ্রেমী ও মানবদরদি ব্যক্তিত্ব মহারাজা বাহাদুর স্যার যতীন্দ্রমোহন ঠাকুর। বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতি জগতের নক্ষত্র তিনি। যতীন্দ্র মোহন ঠাকুর ১৮৩১ সালের ১ মে কলকাতার পাথুরিয়াঘাটার বিখ্যাত জমিদার বংশে, ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি তৎকালীন হিন্দু কলেজে (বর্তমানের প্রেসিডেন্সি কলেজ) পড়া শেষ করে স্বগৃহে ইংরেজ শিক্ষকের কাছে ইংরেজি এবং পণ্ডিতের কাছে সংস্কৃত শেখেন। শৈশবকাল থেকেই যতীন্দ্রমোহনের ইংরেজি ও বাংলা উভয় ভাষাতেই সাহিত্য রচনায় প্রবল আগ্রহ ছিল। তিনি বহু নাটক ও প্রহসন রচনা করেন। ১৮৭০ সালে তিনি বঙ্গীয় আইন পরিষদের সভ্য মনোনীত হন। ১৮৭১ সালে তিনি রাজা বাহাদুর উপাধিতে ভ‚ষিত হন। ১৮৭৭ সালে মহারানি ভিক্টোরিয়া ভারত সম্রাজ্ঞী হওয়ার পর তিনি মহারাজা উপাধি লাভ করেন। ১৮৮২ সালে নাইট উপাধি এবং ১৮৯০ সালে মহারাজা বাহাদুর অভিধায় ভ‚ষিত হন। ১৮৬৫ সালে কলকাতার পাথুরিয়াঘাটায় তিনি বঙ্গ নাট্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। মাইকেল মধুসূদন দত্তের একজন প্রধান পৃৃষ্ঠপোষক হিসেবে তিনি পরিচিত। তাছাড়া তিনি অনেক সংগীতশিল্পীর ওস্তাদ ছিলেন। তিনি পাথুরিয়াঘাটায় বঙ্গ নাট্যালয়ের সূচনা করেন। যতীন্দ্রমোহন ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক ও সভাপতি ছিলেন। এছাড়া তিনি বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক্ষে সভা, শাসন-পরিষদ, শিক্ষা কমিশন, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, জাদুঘর প্রভৃতির সদস্য ছিলেন। সংগীতমনা যতীন্দ্রমোহনের উৎসাহে ঐকতানবাদন প্রণালী এদেশে প্রথম সৃষ্ট হয়। মেয়ো হাসপাতাল, দাতব্য সভা প্রভৃতিতে এবং বিধবাদের দুঃখ দূর করবার জন্য তিনি বহু অর্থ দান করেন। তার অনুপ্রেরণায় কবি মধুসূদন ‘তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য’ রচনা করলে তিনি তা নিজ অর্থে মুদ্রিত করেন। তার একটি গ্রন্থসংগ্রহ ছিল। তিনি ইংরেজি, সংস্কৃত ও বাংলায় বহু প্রবন্ধ ও সংগীত রচনা করেন। তার রচিত নাটক ‘বিদ্যাসুন্দর’, ‘চক্ষুদান’, ‘বুঝলে কিনা’; স্তব ও সংগীতের সংকলন ‘গীতিমালা’; এবং কাব্য ও গল্প সংকলন ‘ফ্লাইটস্ অব ফ্যান্সি’ তার উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকীর্তি। রয়্যাল ফটোগ্রাফার সোসাইটির প্রথম বাঙালি সদস্য তিনি। ১৯০৮ সালের ১০ জানুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা