খ্যাতিমান চিত্রশিল্পী ও শিক্ষক কাজী আবদুল বাসেত। মূর্ত ও বিমূর্ত দুই ধারার চিত্রশিল্পে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তার নিরীক্ষামূলক চিত্রকর্ম ‘ফিশ ওম্যান’ শীর্ষক চিত্রকর্মের জন্য তিনি সুনাম অর্জন করেন। চারুকলায় অবদানের জন্য তিনি ১৯৯১ সালে একুশে পদকে ভ‚ষিত হন। কাজী আবদুল বাসেত ১৯৩৫ সালের ৪ ডিসেম্বর ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক বাড়ি মুন্সীগঞ্জ জেলার রামপাল গ্রামে। বাসেত ১৯৫১ সালে ঢাকার সরকারি মুসলিম হাইস্কুল থেকে প্রবেশিকা পাস করেন। ১৯৫৬ সালে তিনি ঢাকার সরকারি আর্ট ইনস্টিটিউট থেকে চারুকলা বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করে ঢাকার নবাবপুর সরকারি হাইস্কুলে ড্রইং শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৫৭ সালে তিনি তার নিজের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঢাকা সরকারি আর্ট ইনস্টিটিউটে লেকচারার পদে যোগদান করেন। এই ইনস্টিটিউটে শিক্ষাদানকালে ১৯৬৩-৬৪ সালে তিনি ফুলব্রাইট ফেলোশিপ লাভ করে চিত্রশিল্পে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্ট ইনস্টিটিউটে পড়তে যান। ১৯৬৫ সালে দেশে ফিরে তিনি ড্রইং ও পেইন্টিং বিভাগের প্রধান হন। এ সময় (১৯৯১-৯৪) তিনি চারুকলা ইনস্টিটিউটের পরিচালকের দায়িত্বও পালন করেন। ১৯৯৫ সালে তিনি ঢাকা সরকারি আর্ট ইনস্টিটিউট থেকে অবসর গ্রহণ করেন। কাজী আবদুল বাসেত তার শিল্পী জীবনের শুরুতে অবয়বধর্মী কাজে দক্ষতা অর্জন করেন। তিনি জলরং, তেলরং, প্যাস্টেল প্রভৃতি মাধ্যমে চিত্র রচনা করেছেন। এ ছাড়া ছাপচিত্রের বিভিন্ন মাধ্যম (লিথোগ্রাফ, সেরিগ্রাফ) ও রেখাচিত্রেও পারদর্শিতা দেখিয়েছেন। ১৯৮৪ পরবর্তী সময়ে তিনি ফিগারেটিভ চিত্র অঙ্কনে উৎসাহী হয়ে ওঠেন। বাংলাদেশের চিত্রকলাকে আধুনিকতায় উন্নীত করার ক্ষেত্রে তিনি উল্লেখযোগ্য ভ‚মিকা রেখেছেন। কাজী আবদুল বাসেত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা নেয়ার সময় বিমূর্ত প্রকাশবাদী ধারায় প্রভাবিত হন। নারী-অবয়ব, বিশেষ করে নারীর মাতৃরূপ অঙ্কনে তার বিশেষ আগ্রহ ছিল। দেশে-বিদেশে ১৯৫৩ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত বহু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ প্রদর্শনীতে তার চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। শিল্পচর্চার জন্য কাজী আবদুল বাসেত বেশ কিছু পুরস্কার লাভ করেন। তার মধ্যে ১৯৫৪ ও ১৯৫৭ সালে পাকিস্তান চারুকলা প্রদর্শনী থেকে পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া ১৯৮২ সালে তিনি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার, ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ চারুশিল্প সংসদ সম্মাননা এবং ১৯৯১ সালে ‘একুশে পদক’ লাভ করেন। ২০০২ সালের ২৩ মে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা