প্রখ্যাত নাট্যকার, অভিনেতা ও ভাষাসৈনিক মমতাজউদদীন আহমদের আজ তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী। তিনি স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের নাট্য আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ যিনি এক অঙ্কের নাটক লেখায় পারদর্শিতার স্বাক্ষর রাখেন। নাটকে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি ১৯৭৬ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ও ১৯৯৭ সালে একুশে পদক লাভ করেন। মমতাজউদদীন আহমদ ১৯৩৫ সালের ১৮ জানুয়ারি ব্রিটিশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের অন্তর্গত মালদহ জেলার আইহো গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। দেশ বিভাগের পর তারা সপরিবারে তদানীন্তন পূর্ববঙ্গে চলে আসে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ভোলাহাট উপজেলায় তার কিশোরবেলা অতিবাহিত হয়। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় বিএ (অনার্স) ও এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। রাজশাহীতে ভাষা আন্দোলনে তিনি উল্লেখযোগ্য ভ‚মিকা পালন করেন। ছাত্রাবস্থায় তিনি রাজনৈতিক সংগঠন তৎকালীন ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। রাজনৈতিক কারণে তিনি একাধিকবার কারাবরণ করেন। ভাষাশহিদদের স্মরণে রাজশাহী কলেজে শহিদ মিনার নির্মাণে তিনি অগ্রণী ভ‚মিকা রাখেন। মমতাজউদদীন আহমদ ১৯৬৪ সালে চট্টগ্রাম কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষক হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে শিক্ষকতা পেশা শুরু করেন। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ ৩২ বছরের বেশি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি কলেজে বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি ও ইউরোপীয় নাট্যকলায় শিক্ষাদান করেন। তিনি ১৯৭৬-৭৮ সালে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচি প্রণয়নে একজন বিশেষজ্ঞ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৭৭-৮০ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে গবেষণা ও প্রকাশনা বিভাগের পরিচালক ছিলেন। ২০১১ সাল থেকে তিনি জাতিসংঘের বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। মমতাজউদদীন আহমদ বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিকে নিয়মিত কলামও লিখেছেন। তার বেশ কিছু নাটক, প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তিনি ১৭টি গবেষণা, প্রবন্ধ ও ১৪টি গদ্য রচনা করেন। তার লেখা নাটক ‘কি চাহ শঙ্খ চিল’ এবং ‘রাজা অনুস্বরের পালা’ রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। শিল্প ও সাহিত্যে অনন্য অবদানের জন্য তিনি জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে বেশ কিছু পুরস্কার পেয়েছেন। নাট্যকলায় অবদানের জন্য ২০০৮ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি কর্তৃক বিশেষ সম্মাননা, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ও আলাউল সাহিত্য পুরস্কারে ভ‚ষিত হয়েছেন। ২০১৯ সালের ২ জুন তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা