স্মরণীয়-বরণীয়

আধুনিক স্প্যানিশ সাহিত্যের অন্যতম কবি ফেদেরিকো গারসিয়া লোরকা। তিনি একাধারে কবি, নাট্যকার ও মঞ্চ পরিচালক ছিলেন। প্রজন্ম ২৭-এর একজন সদস্য হিসেবে তিনি বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পান। স্পেনে তাকে ‘জনগণের কবি’ বলে ডাকা হয়। তার রচিত অসংখ্য কাব্য সাহিত্য অনূদিত হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের পাঠকদের কাছে। স্প্যানিশ গৃহযুদ্ধের শুরুর দিকে জাতীয়তাবাদী কর্মীরা তাকে হত্যা করে, তার লাশ আর কখনও পাওয়া যায়নি। লোরকা ১৮৯৯ সালের ৫ জুন স্পেনের গ্রানাডা শহরের আন্দালুসিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। আর মা ছিলেন স্কুল শিক্ষক, তিনি পিয়ানো বাজানো শেখাতেন। শৈশবেই মায়ের কাছে লোরকার সংগীতের হাতেখড়ি। স্কুলশিক্ষা শেষ করে তিনি গ্রানাডা বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯১৬-১৭ সালব্যাপী তিনি স্পেনের নানা স্থানে ভ্রমণ করেন দন ফের্নান্দো দে লোস রিয়োস নামের এক অধ্যাপকের সঙ্গে। এ অধ্যাপক তাকে লেখালেখিতে উৎসাহিত করেন। সে সময় তিনি লিখেন ভ্রমণবৃত্তান্ত মানচিত্র ও ভ‚দৃশ্যাবলি। এটিই তার প্রথম প্রকাশিত বই (১৯১৮)। ১৯১৯ সালে তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য মাদ্রিদে যান। সেখানে তিনি একে একে রচনা করেন নাটক ‘প্রজাপতির দুরভিসন্ধি’ ও লোককাহিনি-ভিত্তিক কবিতার বই। ১৯২২ সালে তিনি ‘গভীর গান উৎসব’ আয়োজন করেন। লোরকা ‘সাতাশের প্রজন্ম’ নামে একটি আভাঁ গার্দ শিল্পীসংঘে যোগ দেন। এই সংঘে তার সঙ্গে পরিচয় হয় সালভাদর দালি ও লুইস বুনুয়েলের। ১৯২৭ ও ১৯২৮ এ প্রকাশিত হয় তার ‘গীতিমালা’ ও ‘জিপসি গাঁথা’। ‘জিপসি গাঁথা’ তাকে খ্যাতির শিখরে নিয়ে যায়। ১৯৩০ সালে সেকেন্ড স্প্যানিশ রিপাবলিক ঘোষিত হলে লোরকা দেশে ফিরে আসেন। সেখানে সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক তিনি নাট্যবিষয়ক সংস্থা ‘বাররাকা’র পরিচালক পদে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি গ্রামেগঞ্জে গিয়ে বিনামূল্যে নাটক দেখাতে থাকেন। নিজে নাটক পরিচালনা করেন এবং তাতে অভিনয় করেন। কাব্যগুণে সমৃদ্ধ এই নাটকগুলোতে ধ্বনিত হয় বুর্জোয়া সমাজের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। তিনি শ্রেণি, নারী ও যৌনতার প্রসঙ্গ উত্থাপন করে ট্যাবুশাসিত সমাজের মৌনতা ভেঙে সাধন করেন এক সামাজিক বিপ্লব। তার শেষ কাব্যগ্রন্থ তামসিক প্রেমের সনেট। ১৯৩৬ সালে স্পেনে গৃহযুদ্ধ শুরু হলে ফ্রাঙ্কোর সৈন্যরা তাকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায় ও গুলি করে হত্যা করে।

কাজী সালমা সুলতানা

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০