বাংলা সাহিত্যের রোমান্টিক কবি সৈয়দ ফররুখ আহমদ। তাকে মুসলিম রেনেসাঁর কবি হিসেবেও অভিহিত করা হয়। তিনি ১৯১৮ সালে ১০ জুন মাগুরার শ্রীপুর উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ফররুখ আহমদ ১৯৩৭ সালে খুলনা জেলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক, ১৯৩৯ সালে কলকাতার রিপন কলেজ থেকে আইএ পাস করেন। এরপর তিনি স্কটিশ চার্চ কলেজে দর্শন ও ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স নিয়ে বিএ শ্রেণিতে ভর্তি হন, কিন্তু পড়া শেষ না করেই কর্মজীবনে প্রবেশ করেন। তিনি মাসিক মোহাম্মদী পত্রিকা সম্পাদনা করেন এবং ১৯৪৭ সালের পর ঢাকায় এসে রেডিও ঢাকা কেন্দ্রে স্টাফ শিল্পী হিসেবে যোগ দেন। এখানেই প্রথমে অনিয়মিত এবং পরে নিয়মিত স্টাফ আর্টিস্ট হিসেবে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। ছাত্রাবস্থায় তিনি এম এন রায়ের র্যাডিক্যাল মানবতাবাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে বামপন্থি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। পরে তিনি মুসলিম রেনেসাঁর সমর্থক হন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের প্রতি তাঁর সমর্থন ছিল। ১৯৬৬ সালে সিতারা-ই ইমতিয়াজ খেতাব প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি ধর্মীয় কুসংস্কার ও পাকিস্তানের অপরিণামদর্শী রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে লেখনী পরিচালনা করেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রতিও তার সমর্থন ছিল। কিশোর বয়সে কবিতা রচনার মধ্য দিয়ে তিনি সাহিত্যাঙ্গনে প্রবেশ করেন। ১৯৩৬ খুলনা জেলা স্কুল ম্যাগাজিনে তার প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়। তার রচিত প্রথম প্রকাশিত গল্প ‘অন্তর্লীন’ প্রকাশিত হয় মোহাম্মদীতে। ১৯৩৮ সালে আল্লামা ইকবালের মৃত্যুতে তাকে উদ্দেশ করে লেখেন স্মরণী। ১৯৪৪ সালে কলকাতার দুর্ভিক্ষের পটভ‚মিতে ‘লাশ’ কবিতা লিখেন। কবিতাটি প্রকাশিত হয় সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘আকাল’- গ্রন্থে। বাংলা ভাষায় আরবি-ফারসি শব্দের প্রয়োগনৈপুণ্য এবং বিষয়বস্তু ও আঙ্গিকের অভিনবত্বে তার কবিতা এক বিশেষ মর্যাদা লাভ করেছে। ব্যঙ্গ্যকবিতা ও সনেট রচনায় তার কৃতিত্ব অনস্বীকার্য। তার উল্লেখযোগ্য কবিতা; সাত সাগরের মাঝি, সিরাজাম মুনিরা, নৌফেল ও হাতেম, মুহূর্তের কবিতা ইত্যাদি। পাখির বাসা, হরফের ছড়া, ছড়ার আসর (১৯৭০) ইত্যাদি তার শিশুতোষ রচনা। সাহিত্যে বিশেষ অবদানে জন্য তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬০), প্রেসিডেন্ট পুরস্কার প্রাইড অব পারফরমেন্স , আদমজী পুরস্কার, একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পদক, স্বাধীনতা পদক, ইউনেস্কো পদকে ভ‚ষিত হন। তিনি ১৯৭৪ সালের ১৯ অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা