Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 2:17 pm

স্মরণীয়-বরণীয়

প্রখ্যাত ঔপন্যাসিক ও সমাজসেবক রোমেনা আফাজ। তিনি দস্যু বনহুর সিরিজের জন্য পাঠকপ্রিয়তা লাভ করেন। রোমেনা আফাজ ১৯২৬ সালের ২৭ ডিসেম্বর বগুড়া জেলার শেরপুর শহরে জন্মগ্রহণ করেন। ৯ বছর বয়স থেকেই মায়ের উৎসাহে তিনি লেখালেখি শুরু করেন। তার প্রথম লেখা ‘বাংলার চাষী’ নামক ছড়া প্রকাশিত হয় কলকাতার মোহাম্মদী পত্রিকায়। তার প্রথম বই হচ্ছে ‘রক্তে আঁকা ম্যাপ’। বগুড়ার ‘সাহিত্য কুঠির’ নামের একটি প্রকাশনা সংস্থা ১৯৫৯ সালে বইটি প্রকাশ করে। এই বইটি ছিল দস্যু রানি সিরিজের প্রথম বই। তিনি অসংখ্য ছোটগল্প, কবিতা, কিশোর উপন্যাস, সামাজিক উপন্যাস, গোয়েন্দা সিরিজ ও রহস্য সিরিজ রচনা করেছেন। ১৯৬৫ সালে প্রথম প্রকাশিত হয় ‘দস্যু বনহুর’। এই সিরিজের মাধ্যমে তার পরিচিতি গড়ে ওঠে ‘দস্যু বনহুর-খ্যাত রোমেনা আফাজ’ নামে। তার লেখা বইয়ের সংখ্যা ২৫০টি। এর মধ্যে ১৩৮টি দস্যু বনহুর সিরিজ এবং ১২টি দস্যু রানি সিরিজ। তার রচিত সাহিত্যের মধ্যে দেশের মেয়ে: সামাজিক ও পারিবারিক, জানি তুমি আসবে: প্রণয়মূলক উপন্যাস, বনহুর: রহস্য সিরিজ, রক্তে আকা মাপ: দুঃসাহসিক অভিযান, মান্দিগোর বাড়ি: কিশোর উপন্যাস ও বিদগ্ধা জননী: সামাজিক উপন্যাস উল্লেখযোগ্য। তার লেখা ছয়টি উপন্যাস অবলম্বনে এরই মধ্যে চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। চলচ্চিত্রগুলো হলোÑকাগজের নৌকা, মোমের আলো, মায়ার সংসার, মধুমিতা, মাটির মানুষ ও দস্যু বনহুর। রোমেনা আফাজ প্রতিভাময়ী লেখক হওয়ার পাশাপাশি একজন সক্রিয় সমাজসেবিকাও ছিলেন। তিনি ৩৭টি সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন। তার মধ্যে জাতীয় মহিলা সংস্থা, বগুড়ার সাবেক চেয়ারম্যান; ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ, বগুড়ার আজীবন উপদেষ্টা ও প্রতিষ্ঠাতা পৃষ্ঠপোষক; বাংলাদেশ মহিলা জাতীয় ক্রীড়া সংস্থা, বগুড়ার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান; উদীচী সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী, বগুড়ার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান; বাংলাদেশ রেডক্রস সমিতি উল্লেখযোগ্য। তিনি সাহিত্য ও শিল্পকলায় অসাধারণ অবদানের জন্য বিভিন্ন সংগঠন থেকে পেয়েছেন বহু পুরস্কার ও সম্মাননা। ২০১০ সালে তিনি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার হিসেবে পরিচিত ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ লাভ করেন। এছাড়া তিনি ঢাকার নারীগ্রন্থ প্রবর্তনা গুণীজন-১৯৯৯ সংবর্ধনা; নারী বিকাশ সংস্থা, বগুড়া থেকে বেগম রোকেয়া স্বর্ণপদক-২০০০; বাংলাদেশ রাইটার্স ফোরাম, বগুড়া থেকে একুশে পদক (সাহিত্য) ২০০৩ এবং গণউন্নয়ন গ্রন্থাগার নারী ফোরাম থেকে নারীমুক্তি আন্দোলনের অগ্রদূত সম্মাননা পদক, ২০০৬ লাভ করেন। তিনি ২০০৩ সালের ১২ জুন মৃত্যুবরণ করেন।

কাজী সালমা সুলতানা