বিশিষ্ট দার্শনিক, শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক ও প্রবন্ধকার সরদার ফজলুল করিমের আজ সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী। তিনি ১৯২৫ সালের ১ মে বরিশালের আটিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪০ সালে বরিশাল জেলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাস করে তিনি ঢাকায় চলে আসেন, ভর্তি হন ঢাকা কলেজে। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। ১৯৪২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি ইংরেজি বিভাগে বিএ অনার্সে ভর্তি হন। পরে চলে আসেন দর্শন বিভাগে। ১৯৪৫ সালে সরদার ফজলুল করিম দর্শনশাস্ত্রে বিএ অনার্স ও ১৯৪৬ সালে এমএ পাস করেন। উভয় পরীক্ষায় তিনি প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান লাভ করেন। রাজনীতির কারণে তিনি লন্ডনের স্কলারশিপ প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি ১৯৪৬ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। ১৯৪৮ সালে রাজনীতির কারণে স্বেচ্ছামূলকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতায় ইস্তফা দেন তিনি। সাম্যবাদী বামপন্থি সামাজিক-রাজনৈতিক আন্দোলনে যুক্ত থাকার পর্যায়ে তিনি পাকিস্তান সরকার কর্তৃক নিগৃহীত হন। রাজবন্দি হিসেবে ১১ বছর বিভিন্ন সময়ে তিনি কারাভোগ করেন। জেলে থাকা অবস্থাতেই ১৯৫৪ সালে তিনি পাকিস্তান সংবিধান সভার সদস্য হিসেবে কাজ করেন। সরদার ফজলুল করিম ১৯৬৩ সালে বাংলা একাডেমির অনুবাদ শাখায় যোগ দেন। ১৯৭১ সালে তিনি বাংলা একাডেমির সংস্কৃতি শাখার বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী তাকে গ্রেপ্তার করে। জেলে তিনি নিষ্ঠুর নির্যাতনের শিকার হন। ১৯৭১ সালের ১৭ ডিসেম্বর তিনি মুক্তি পান। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত তিনি আবারও শিক্ষকতা করেন। তিনি ১৭টি সাহিত্য, অনুবাদ ও প্রবন্ধ রচনা করেছেন। তার গ্রন্থের মধ্যে চল্লিশের দশকে ঢাকা, রুমীর আম্মা, প্লেটোর রিপাবলিক, অ্যারিস্টটলের পলিটিকস, রুশোর সোশ্যাল কন্ট্রাক্ট, দ্য কনফেশনস, দর্শনকোষ ও শহীদ জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা স্মারকগ্রন্থ উল্লেখযোগ্য। তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার ও স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার ছাড়াও নানা পুরস্কার ও সম্মাননা অর্জন করেন। ২০১৪ সালের ১৪ জুন তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা