Print Date & Time : 22 June 2025 Sunday 3:41 pm

স্মরণীয়-বরণীয়

আইনজীবী ও রাজনীতিবিদ স্বরাজ পার্টির প্রতিষ্ঠাতা, কবি ও লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ। তিনি বেঙ্গল প্যাক্টের প্রবক্তা। দেশবন্ধু নামে তিনি বিখ্যাত হয়ে আছেন। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ ১৮৭০ সালের ৫ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তার পরিবারের আদি নিবাস ছিল মুন্সীগঞ্জের তেলিরবাগে। চিত্তরঞ্জন দাশ বিশ শতকের প্রথম দিকে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। বিপ্লবী সংগঠন অনুশীলন সমিতির সঙ্গে তিনি যুক্ত ছিলেন। ১৮৯৪ সালে কলকাতা হাইকোর্টে ব্যারিস্টার হিসেবে নিজের নাম তালিকাভুক্ত করেন। তিনি ঢাকা ষড়যন্ত্র মামলায় (১৯১০-১১) বিবাদী পক্ষের কৌঁসুলি ছিলেন। অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে মহাত্মা গান্ধীর আহ্বানে তিনি আইনজীবীর পেশা পরিত্যাগ করেন এবং ১৯২১ সালে প্রিন্স অব ওয়েলসের কলকাতা সফর বর্জনে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করেন। ব্রিটিশ সরকার তাকে অনেকবার কারাগারে অন্তরীণ করেন। মহাত্মা গান্ধী যখন অসহযোগ আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা করেন, তখন সি.আর দাশ তার তীব্র সমালোচনা করেন। কংগ্রেসের আইন পরিষদ বর্জনের নীতিকে তিনি দৃঢ়ভাবে বিরোধিতা করেন। ১৯২২ সালে তিনি কংগ্রেসের অভ্যন্তরে স্বরাজ দলের ভিত্তি স্থাপন করেন। ১৯২৩ সালে অনুষ্ঠিত বঙ্গীয় বিধান পরিষদের নির্বাচনে স্বরাজ দল বিজয় অর্জন করে। একই বছর তিনি স্বরাজ দলের মুখপাত্র হিসেবে সাপ্তাহিকী দ্য ফরওয়ার্ড প্রতিষ্ঠা করেন ও হিন্দু-মুসলমান সম্প্রীতি রক্ষার স্বার্থে ‘বেঙ্গল প্যাক্ট’ নামে একটি ঐতিহাসিক চুক্তি সম্পাদনা করেন। ১৯২৪ সালে চিত্তরঞ্জন দাশ কলকাতা করপোরেশনের প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন। বাঙালি জাতীয়তাবাদ, ধর্মের সম্প্রীতি ও ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলন ছিল তার মূল রাজনৈতিক দর্শন। তিনি ছিলেন রাজনৈতিক বাস্তববাদী এবং প্রচণ্ড বিরোধিতায়ও নিজ অবস্থানে অটল থাকতেন। রাজনীতির মধ্যে থেকেও তিনি নিয়মিত সাহিত্যচর্চা করতেন। সে সময়ের বিখ্যাত সাহিত্য পত্রিকা ‘নারায়ণ’-এর তিনি ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। মালঞ্চ, মালা, সাগর সংগীত ও অন্তর্যামী কাব্যগ্রন্থের জন্য তিনি কবি হিসেবেও খ্যাতি লাভ করেন। তিনি জাত-বৈষম্য ও অস্পৃশ্যতার ঊর্ধ্বে ছিলেন। তিনি নারী মুক্তি সমর্থন করতেন এবং নারীশিক্ষা ও বিধবাদের পুনর্বিবাহকে উৎসাহিত করতেন। তিনি নিজ মেয়েদের ব্রাহ্মণ ও কায়স্থ পরিবারে বিয়ে দেন। ১৯২৫ সালের ১৬ জুন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুতে ব্যথিত হয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন, ‘এনেছিলে সাথে করে মৃত্যুহীন প্রাণ, মরণে তাহাই তুমি করে গেলে দান’।

কাজী সালমা সুলতানা