Print Date & Time : 22 June 2025 Sunday 3:34 am

স্মরণীয়-বরণীয়

ভাষা আন্দোলনের অন্যতম নেতা, মুক্তিযোদ্ধা, সাহিত্যিক, গীতিকার আইনজীবী গাজীউল হক। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন সরকার ১৪৪ ধারা জারি ভঙ্গকারীদের অন্যতম ছিলেন তিনি। গাজীউল হকের লেখা ‘ভুলব না ভুলব না ভুলব না এই একুশে ফেব্রুয়ারি ভুলব না’ গানটি গেয়ে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত প্রভাতফেরি করা হতো। তিনি রাষ্ট্রভাষা পদক ও সম্মাননা স্মারক, শেরেবাংলা জাতীয় পুরস্কার লাভ করেন। গাজীউল হক ১৯২৯ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া থানার নিচিন্তপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পুরো নাম আবু নছর মোহাম্মদ গাজীউল হক। তিনি বগুড়া জেলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন (১৯৪৬), বগুড়া আযিযুল হক কলেজ থেকে আইএ (১৯৪৮) এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস নিয়ে বিএ অনার্স (১৯৫১), এমএ (১৯৫২) ডিগ্রি ও ১৯৫৬ সালে এলএলবি ডিগ্রি লাভ করেন। গাজীউল হক স্কুলজীবন থেকেই বিভিন্ন প্রগতিশীল আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত হন। কলেজে ভর্তি হয়েই তিনি অধ্যক্ষ ভাষা বিজ্ঞানী মুহম্মদ শহীদুল্লাহর সংস্পর্শে এসে বাম রাজনীতিতে আসেন। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের জন্য ১৯৪২ সালে তিনি কারাবন্দি হন। ১৯৪৪ সালে তিনি বঙ্গীয় মুসলিম ছাত্রলীগ বগুড়া জেলা শাখার যুগ্ম সম্পাদক নিযুক্ত হন এবং ওই বছর কুষ্টিয়ার নিখিল বঙ্গ মুসলিম ছাত্রলীগের কনফারেন্সে যোগ দেন। ১৯৫২ সালে প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা দিলে গাজীউল হক ভাষা আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। তিনি ২১ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার আমতলায় এক সভায় সভাপতিত্ব করেন এবং ১৪৪ ধারা ভঙ্গের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। সে জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার এমএ ডিগ্রি বাতিল করে পরবর্তীতে প্রচণ্ড আন্দোলনের চাপে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার এমএ ডিগ্রি ফেরত দিতে বাধ্য হয়। ভাষা আন্দোলনে সংশ্লিষ্টতার কারণে বেশ কয়েকবার তিনি কারাভোগ করেন। ১৯৫৪-এর নির্বাচনকালে এবং ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর তিনি গ্রেপ্তার হন। মুক্তিযুদ্ধকালে তার নেতৃত্বে উত্তরবঙ্গের আড়িয়া ক্যান্টনমেন্ট শত্রুমুক্ত হয়। গাজীউল হক ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ: জেলের কবিতা, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, বাংলাদেশ আনচেইন্ড, মিডিয়া লস অ্যান্ড রেগুলেশন্স ইন বাংলাদেশ, বাংলাদেশের গণমাধ্যম আইন ও বিধিমালা, প্রভৃতি। তিনি রাষ্ট্রভাষা পদক, ভাষাসৈনিক পদক, একুশে পদকসহ অনেক পদক ও সম্মাননা অর্জন করেন। ২০০৯ সালের ১৭ জুন তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

কাজী সালমা সুলতানা