স্মরণীয়-বরণীয়

উপমহাদেশের ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন অন্যতম ব্যক্তিত্ব এবং অগ্নিযুগের বিপ্লবী নলিনী দাসের আজ ৪০তম মৃত্যুবার্ষিকী। তিনি ১৯৮২ সালের ১৯ জুন মৃত্যুবরণ করেন। বিপ্লবী নলিনী দাস ১৯১০ সালের ১ জানুয়ারি বরিশালের সাহবাজপুরের দাদপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় ১২ বছর বয়সে তিনি পাঞ্জাবের জালিওয়ানবাগে ব্রিটিশের নৃশংস গণহত্যার প্রতিবাদে হরতাল ও ধর্মঘটে অংশগ্রহণ করেন। এই অপরাধে কিশোর নলিনীসহ পাঁচজনকে ব্রিটিশ পুলিশ গ্রেপ্তার করে। এক দিনের সাজা দিয়ে পুলিশ তাকে ছেড়ে দেয়। ১৯২৮ সালে তিনি ভোলা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাস করে বরিশাল বিএম কলেজে আইএসসি ক্লাসে ভর্তি হন। আইএসসি পরীক্ষার আগে কলকাতা মেছুয়া বাজারে বোমার মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়, তাই তিনি পরীক্ষা দিতে পারেননি। নলিনী দাস কিশোর বয়সেই অনুশীলন, যুগান্তর প্রভৃতি বিপ্লবী দলের সঙ্গে যুক্ত হন। ব্রিটিশ সরকার-বিরোধী বিভিন্ন কার্যক্রমে তিনি অংশগ্রহণ করেন, কিন্তু তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত বিভিন্ন হত্যামামলার তথ্য-প্রমাণ না পাওয়ায় ব্রিটিশ সরকার ১৯৩৪ সালে তাকে আন্দামান দ্বীপান্তর সেলুলার জেলে পাঠিয়ে দেয়। আন্দামান দ্বীপান্তরে গিয়ে তিনি জেলখানার মধ্যে সব বন্দিকে সংঘবদ্ধ করে জেল প্রশাসন ও ব্রিটিশের বিরুদ্ধে আমরণ অনশন করেন। আন্দোলনের চাপে ব্রিটিশ সরকার ১৯৩৮ সালে আন্দামান থেকে তাকে কলকাতায় ফিরিয়ে আনলেও ৩০ রাজবন্দিসহ তাকে ‘ভয়ানক বিপ্লবী ব্যক্তি’ হিসেবে চিহ্নিত করে ১৯৪৬ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কারাগারে আটক রাখে। তিনি ২৩ বছর আন্দামান সেলুলার জেল, ব্রিটিশ ভারতের অন্যান্য জেল, ভারতের জেল ও পাকিস্তানের কারাগারে অতিবাহিত করেন। কারাগারে  আটক অবস্থায় তিনি ‘দ্বীপান্তরের বন্দী’ নামক একটি গ্রন্থ রচনা করেন।  দেশবিভাগের পর তিনি বরিশালে চলে এসে কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হয়ে কৃষক সমিতিকে গড়ে তোলার কাজে আত্মনিয়োগ করেন। এছাড়া পশ্চিম পাকিস্তানের আধিপত্য থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য তিনি সক্রিয় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। পাকিস্তান আমলটাও তার কেটেছে জেলে বন্দি অবস্থায় আর আত্মগোপন করে। ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ’৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানে তিনি বৃহত্তর বরিশালের ছাত্র-যুবকদের সংগঠিত করে তুমুল আন্দোলন গড়ে তোলেন। ১৯৭০ সালে স্বরূপকাঠীর ব্যাসকাঠীর কৃষক সম্মেলনে কৃষকদের সংগঠিত করার ক্ষেত্রে তিনি ভূমিকা  রাখেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি বৃহত্তর বরিশালের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। পরে স্বাধীন বাংলাদেশে তিনি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির অগ্রসেনানী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

কাজী সালমা সুলতানা

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০