কবি ও নারী প্রগতি আন্দোলনের একজন পুরোধা ব্যক্তিত্ব বেগম সুফিয়া কামালের আজ ১১১তম জন্ম বার্ষিকী। তিনি ১৯১১ সালের ২০ জুন বরিশালের শায়েস্তাবাদে জন্মগ্রহণ করেন। ওই সময় বাঙালি মুসলিম নারীদের স্কুল-কলেজে পড়ার কোনো সুযোগ ছিল না। বেগম সুফিয়া কামাল প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ না করেও নিজ চেষ্টায় তিনি হয়ে ওঠেন স্বশিক্ষিত ও সুশিক্ষিত। ১৯১৮ সালে তিনি মায়ের সঙ্গে কলকাতা গেলে সেখানে তার সাক্ষাৎ হয় রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে। ১৯২৩ সালে সৈয়দ নেহাল হোসেনের সঙ্গে সুফিয়ার বিয়ে হয়। বিয়ের পর স্বামী সৈয়দ নেহাল হোসেন সুফিয়াকে সমাজসেবা ও সাহিত্যচর্চায় উৎসাহ দেন। ফলে তিনি সাহিত্য রচনায় আগ্রহী হয়ে ওঠেন। ১৯২৩ সালে তিনি রচনা করেন তার প্রথম গল্প ‘সৈনিক বধূ’, যা সেসময় বরিশালের তরুণ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ১৯২৬ সালে বেগম সুফিয়া কামালের প্রথম কবিতা ‘বাসন্তী’ সওগাত পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ১৯৩৮ সালে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘সাঁঝের মায়া’ প্রকাশিত হয়। এই গ্রন্থের মুখবন্ধ লেখেন কাজী নজরুল ইসলাম। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বইটির প্রশংসা করেন। সুফিয়া কামাল দেশবিভাগের আগে কিছুদিন বেগম পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন এবং অন্য নারীদের উদ্বুদ্ধ করেন। ১৯৫৬ সালে তিনি রোকনুজ্জামান দাদা ভাই ও আবদুল্লাহ আল মুতিকে নিয়ে শিশুদের সংগঠন কচিকাঁচার মেলা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৬১ সালে পাকিস্তান সরকার রবীন্দ্রসংগীত নিষিদ্ধ করলে তার প্রতিবাদে সংগঠিত আন্দোলনে বেগম সুফিয়া কামাল সংশ্লিষ্ট ছিলেন। এ বছরে তিনি ছায়ানটের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেন এবং পাকিস্তান সরকারের দেয়া তমঘা-ই-ইমতিয়াজ পদক বর্জন করেন। বেগম রোকেয়ার সামাজিক আদর্শ সুফিয়াকে আজীবন প্রভাবিত করেছে। ১৯৭১ সালের মার্চের অসহযোগ আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। ১৯৯০ সালে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনেও সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন তিনি। মুক্তবুদ্ধির চর্চার পক্ষে এবং সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদের বিপক্ষে আমৃত্যু সংগ্রাম করেছেন সুফিয়া কামাল। তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ২০টিরও বেশি। সাহিত্য ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক, স্বাধীনতা পদকসহ দেশি-বিদেশি ৫০টিরও বেশি পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেছেন। তিনি ১৯৯৯ সালের ২০ নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।কাজী সালমা সুলতানা

Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 10:34 pm
স্মরণীয়-বরণীয়
মতামত ♦ প্রকাশ: