অবিভক্ত ব্রিটিশ ভারতের কৃষকনেতা ও রাজনীতিক হাজী মোহাম্মদ দানেশের আজ ৩৬তম মৃত্যুবার্ষিকী। তিনি তেভাগা আন্দোলনের ‘জনক’ হিসেবে পরিচিত। ব্রিটিশবিরোধী আন্দলনে নেতৃত্বদানকারী বরেণ্য ব্যক্তিদের মধ্যে হাজি মোহাম্মদ দানেশ অন্যতম। ঠাকুরগাঁও তথা বৃহত্তর দিনাজপুরের মেহনতি মানুষের মুক্তির সংগ্রামে আজীবন নিজেকে উৎসর্গ করেছেন এই বিপ্লবী নেতা। হাজী মোহাম্মদ দানেশ ১৯০০ সালে দিনাজপুর জেলার সুলতানপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৩১ সালে ইতিহাসে এমএ এবং ১৯৩২ সালে বিএল ডিগ্রি লাভ করে, দিনাজপুর জেলা আদালতে যোগ দেন। ১৯৩৮ সালে তিনি বঙ্গীয় প্রাদেশিক কমিউনিস্ট পার্টির অঙ্গ সংগঠন কৃষক সমিতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন এবং কৃষক আন্দোলন সংগঠিত করেন। তার নেতৃত্বে দিনাজপুর জেলায় টোল আদায় বন্ধ ও জমিদারি উচ্ছেদের দাবিতে কৃষক আন্দোলন জোরদার হয় এবং আন্দোলনকালে তিনি কারাভোগ করেন। ১৯৩৮ থেকে ১৯৪২ সাল পর্যন্ত তিনি তোলাবাটি আন্দোলন, সুসংবদ্ধ আন্দোলন, গান্ডি আদায় বন্ধ আন্দোলন, ‘জাল যার জলা তার’ আন্দোলন করেন ও গ্রেপ্তার হন। ব্রিটিশ শাসনামল ও পাকিস্তান শাসনামলে তিনি সর্বমোট ২৮ বছর কারাভোগ করেন। হাজী দানেশ ১৯৪২ সালের বঙ্গীয় কৃষক সম্মেলনের অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন। ১৯৪৫ সালে তিনি মুসলিম লীগে যোগদান করেন কিন্তু তেভাগা আন্দোলনে নেতৃত্ব দান অব্যাহত রাখার কারণে ১৯৪৬ সালে মুসলিম লীগ থেকে বহিষ্কৃত ও পরে গ্রেপ্তার হন। ১৯৪৭ সালে মুক্তিলাভ করে তিনি দিনাজপুরের সুরেন্দ্রনাথ কলেজে ইতিহাসের অধ্যাপক পদে যোগ দেন। ১৯৫২ সালে তিনি গণতন্ত্রী দল নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করে ওই দলের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে দিনাজপুর জেলা থেকে পূর্ব বঙ্গ আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৫৭ সালে ভাসানীর নেতৃত্বে গঠিত ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে যোগ দেন এবং দলের সহসভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালে তিনি ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি থেকে পদত্যাগ করে, মুজিবনগরে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করেন। হাজী মোহাম্মদ দানেশ ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। ১৯৮৬ সালের ২৮ জুন তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তার নামে দিনাজপুরের কৃষি কলেজ ১৯৯৯ সালে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত হয়।
কাজী সালমা সুলতানা