বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার শেষ স্বাধীন নবাব মির্জা মুহম্মদ সিরাজ-উদ-দৌলার ২৬৬তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। পলাশীর যুদ্ধে তার পরাজয় ও মৃত্যুর পরই ভারতবর্ষে ইংরেজ শাসনের সূচনা হয়। ১৭৩৩ সালে মির্জা মুহম্মদ (সিরাজ-উদ-দৌলা) জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন বাংলার নবাব আলিবর্দী খানের নাতি। সিরাজের জন্মকে সৌভাগ্যের লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করে নবাব আলীবর্দী খান আনন্দে নবজাতক সিরাজ-উদ-দৌলাকে পোষ্যপুত্র হিসেবে গ্রহণ করেন। যুবরাজ সিরাজ-উদ-দৌলাকে তরুণ বয়সেই তিনি পাটনার গুরুত্বপূর্ণ পদে নিযুক্ত করেন। নানা নবাব আলিবর্দী খানের উত্তরাধিকার হিসেবে সাড়ে ২৩ বছর বয়সে ১৭৫৬ সালের ১০ এপ্রিল শাহ কুলি খান মির্জা মোহাম্মদ হাযরৎ জং বাহাদুর (সিরাজ-উদ-দৌলা) বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার সিংহাসনে আরোহণ করেন। তিনি ১৭৫৬ সালের এপ্রিল থেকে ১৭৫৭ সালের জুন পর্যন্ত বাংলা শাসন করেন। এ সময় তার জন্য বাংলার মসনদ ছিল কণ্টকাকীর্ণ। স্বল্পকালীন শাসনের পুরো সময় জুড়েই সিরাজ-উদ-দৌলাকে পরিবারের ভেতর ও বাইরের শত্রুদের মোকাবিলা করতে হয়। সিরাজ-উদ-দৌলা মসনদে বসেই মীরজাফরকে সেনাবাহিনীর প্রধান বখশির পদ থেকে সরিয়ে মীর মর্দানকে সেখানে নিয়োগ দেন। এছাড়া মোহন লালকে প্রধানমন্ত্রী পদে নিযুক্ত করেন। এরপর তিনি কলকাতায় অবস্থিত কাশিমবাজার কুঠিরের ইংরেজদের বণিকদের ব্যাপারে মনোযোগী হন। তিনি ইংরেজদের সমুচিত শিক্ষা দেয়ার উদ্দেশ্যে ১৭৫৬ সালের ২৯ মে কাশিম বাজার কুঠি অবরোধ করেন এবং পরবর্তীকালে কলকাতা অধিকার করে ইংরেজদের বিতাড়িত করেন। কলকাতার নাম বদল করে নবাব আলীবর্দী খানের নামানুসারে ‘আলী নগর’ নাম রাখেন। এ ঘটনার পর ইংরেজরা নতুন ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নেয়। তারা জগৎশেঠের মাধ্যমে মীর জাফরকে মসনদে বসানোর চূড়ান্ত পরিকল্পনা করে ফেলে। পরিকল্পনায় আরও যোগ দেন রাজা রায় দুর্লভ, উমিচাঁদ, রাজবল্লভ, ঘসেটি বেগম, মীরন, মীর কাশিম, ইয়ার লতিফ খান প্রমুখ। ফলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে ১৭৫৭ সালের ৫ জুন মীর জাফরের একটি গোপন চুক্তি সম্পাদিত হয়, যার পরিণতি ২৩ জুন পলাশীর যুদ্ধ। ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা পলাশীর প্রান্তরে ক্লাইভের মুখোমুখি হন। পলাশীর যুদ্ধে মীর জাফরের বিশ্বাসঘাতকতায় তিনি পরাজিত হন এবং যুদ্ধক্ষেত্র ত্যাগ করেন। পরে পাটনা যাওয়ার পথে ১৭৫৭ সালের ২ জুলাই মীরজাফরের ছেলে মীরনের নির্দেশে মুহাম্মদি বেগের হাতে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা নিহত হন। পলাশীর যুদ্ধে তার পরাজয়ের মাধ্যমে ভারতবর্ষে প্রায় ২০০ বছরের ইংরেজ শাসনের সূচনা হয়।
কাজী সালমা সুলতানা