স্মরণীয়-বরণীয়

‘স্মৃতির মিনার ভেঙেছে তোমার? ভয় কি বন্ধু, আমরা এখনও চার কোটি পরিবার খাড়া রয়েছি তো! যে-ভিত কখনও কোনো রাজন্য পারেনি ভাঙতে।’ প্রথম শহিদ মিনার ভাঙার প্রতিবাদে কবিতা লিখেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আলাউদ্দিন আল আজাদ। আজ তার ত্রয়োদশ মৃত্যুবার্ষিকী। সব্যসাচী সাহিত্যিক, কবি ও শিক্ষাবিদ আলাউদ্দিন আল আজাদ ১৯৩২ সালের ৬ মে নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার রামনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৪৭ সালে নারায়ণপুর শরাফতউল্লাহ উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয় থেকে মেট্রিক এবং ১৯৪৯ সালে ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকে আইএ পাস করেন। মাত্র ১৪ বছর বয়সে তার রচিত প্রবন্ধ ‘আবেগ’ ও গল্প ‘জানোয়ার’ মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিন সম্পাদিত ‘সওগাত’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। দেশ বিভাগের পরে তিনি দেশের চলমান প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। বায়ান্নর রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে তিনি ছিলেন সক্রিয় কর্মী। ১৯৫৩ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে স্নাতক এবং ১৯৫৪ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। অধ্যয়ন শেষে আলাউদ্দিন আল আজাদ অধ্যাপনা পেশায় যুক্ত হন। তিনি নারায়ণগঞ্জের তোলারাম কলেজ, জগন্নাথ কলেজ, সিলেটের এমসি কলেজ, চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। ১৯৭০ সালে তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঈশ্বরগুপ্তের জীবন ও কবিতা বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। এক বছর (১৯৭৪) ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি মস্কোর বাংলাদেশ দূতাবাসে সংস্কৃতি উপদেষ্টা, শিক্ষা সচিব এবং সংস্কৃতিবিষয়ক বিভাগ ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। আলাউদ্দিন আল আজাদ ভাষা আন্দোলনের গণমুখী ও স্বদেশপ্রেমী সাহিত্যধারার লেখক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীনতার পক্ষে বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর ছিলেন তিনি। কবিতা, নাটক, উপন্যাস, গল্প, প্রবন্ধ, শিল্প-সাহিত্য সমালোচনা, নন্দনতত্ত্ব থেকে গবেষণা, শিশুসাহিত্য, সম্পাদনা ও অনুবাদ-সাহিত্যের প্রতিটি ধারায় ছিল তার বিচরণ। তিনি ১১৮টি গল্প, ২৪টি উপন্যাস, ১২টি নাটক, ১১টি কাব্যগ্রন্থ, পাঁচটি প্রবন্ধ সংকলন, ত্রিশের বেশি সংকলিত গ্রন্থ এবং বিশের অধিক অনুবাদিত গ্রন্থ থেকে অজস্র সাহিত্য সমালোচনা রচনা করেন। তার প্রথম উপন্যাস ‘তেইশ নম্বর তৈলচিত্র’-এর ওপর ভিত্তি করে পরবর্তীকালে নির্মিত হয় বিখ্যাত চলচ্চিত্র ‘বসুন্ধরা’। সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার, ইউনেস্কো পুরস্কার, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, একুশে পদক ও দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ স্বর্ণপদক অর্জন করেন। তিনি ২০০৯ সালের ৩ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন।

কাজী সালমা সুলতানা

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০