‘বহুরূপে সম্মুখে তোমার ছাড়ি কোথা খুঁজিছ ঈশ্বর?/জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর।’ দার্শনিক, ধর্মীয়-সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠাতা স্বামী বিবেকানন্দের আজ ১২০তম মৃত্যুবার্ষিকী। তিনি ১৮৬৩ সালের ১২ জানুয়ারি কলকাতার শিমুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পারিবারিক নাম ছিল নরেন্দ্রনাথ দত্ত। ১৮৭১ সালে তিনি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশনে ভর্তি হন। প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে প্রবেশিকা পাস করেন। কলেজে পড়ার সময় তিনি পাশ্চাত্য যুক্তিবিদ্যা, পাশ্চাত্য দর্শন ও ইউরোপীয় ইতিহাস পড়ায় মনোযোগ দেন। ১৮৮১ সালে তিনি চারুকলা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৮৮৩ সালে স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। নরেন্দ্রনাথ প্রচুর বই পড়তেন। তিনি দর্শন, ইতিহাস, সাহিত্য, বিজ্ঞান ইত্যাদি গভীর মনোযোগে অধ্যায়ন করেন। তিনি দার্শনিক ডেভিড হিউম, জর্জ ডব্লিউ. এফ. হেগেল, আর্থার সোফেনহায়ার, ওগুস্ত কোঁত, জন স্টুয়ার্ট মিল ও চার্লস ডারউইনের রচনাবলি পাঠ করেন। পাশ্চাত্য দার্শনিকদের রচনাবলি পড়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি সংস্কৃত ধর্মগ্রন্থ ও বাংলা সাহিত্য নিয়েও চর্চা করেন। তিনি দার্শনিক, লেখক, সংগীতজ্ঞ অতীন্দ্রিয়বাদী রামকৃষ্ণ পরমহংসের প্রধান শিষ্য ছিলেন। গুরু রামকৃষ্ণ দেবের কাছ থেকে তিনি শেখেন, সকল জীবই ঈশ্বরের প্রতিভূ; তাই মানুষের সেবা করলেই ঈশ্বরের সেবা করা হয়। তিনি ছিলেন সংগীতজ্ঞ ও গায়ক। এছাড়া তিনি নিয়মিত অনুশীলন, খেলাধুলা ও সমাজসেবামূলক কাজকর্মে অংশ নিতেন। ১৮৮৬ সালে নরেন্দ্রনাথ দত্ত ‘স্বামী বিবেকানন্দ’ নাম গ্রহণ করেন। ১৮৯৭ সালে তিনি রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ধর্ম প্রচারে একাধিকবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, চীন, জাপান, মিসরসহ নানা দেশ ভ্রমণ করেন। বিবেকানন্দ ছিলেন একজন বিশিষ্ট বাগ্মী ও লেখক। ব্রিটিশ শাসনকে তিনি অত্যন্ত ঘৃণা করতেন। মানুষের সেবা করা এবং সকল প্রকার কুসংস্কার থেকে মুক্তি এবং অমানবিক কর্ম থেকে মুক্ত হয়ে একটি দৃঢ় জাতিসত্তা গঠন করা ছিল তার লক্ষ্য। ভারতে বিবেকানন্দকে ‘বীর সন্ন্যাসী’ নামে অভিহিত করা হয় এবং তার জন্মদিনটি জাতীয় যুব দিবস হিসেবে পালিত হয়। ১৯০২ সালের ৪ জুলাই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা