বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ডা. আবদুল্লাহ আল মাহমুদের ৭৫তম জন্মদিবস আজ। তিনি ১৯৪৭ সালের ১৬ জুলাই শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার কাকিলাকুড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মফিজল হক এবং মায়ের নাম রোকেয়া হক।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধেও সময় তিনি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি স্থানীয় যোদ্ধাদের সঙ্গে যোগ দেন। পরে তাদের সঙ্গে ভারতের ঢালুতে আশ্রয় নেন। সেখানে তারা নিজ প্রচেষ্টায় একটা প্রশিক্ষণকেন্দ্র গড়ে তোলেন। জুন মাসের পর তাদেও আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ শুরু হয়। প্রশিক্ষণ শেষে তিনি ১১ নম্বর সেক্টরের সাব-সেক্টর অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এই সাব-সেক্টরের অপারেশনাল এলাকা ছিল হালুয়াঘাট, ঢালু, ময়মনসিংহ সড়ক পর্যন্ত এসব এলাকায় আগস্ট মাস থেকে অনেক যুদ্ধ হয়। কয়েকটি যুদ্ধে তিনি সরাসরি অংশ নেন। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী তেলিখালী গ্রাম ছিল পাকিস্তানিদের দুর্ভেদ্য একটি ঘাঁটি। এর প্রতিরক্ষায় ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ৩৩ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের ১২৫ জনসহ রেঞ্জার্স ও রাজাকার। সব মিলিয়ে প্রায় ২৩৭ জন। দূরে বাঘাইতলীতে ছিল তাদের গোলন্দাজ বাহিনীর একটি দল। ১৯৭১ সালের ৩ অক্টোবর গভীর রাতে মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনীর রাজপুত রেজিমেন্ট একত্রে পাকিস্তানিদের ঘাঁটি আক্রমণ করে । ‘জয় বাংলা’ সেøাগান দিতে দিতে মুক্তিযোদ্ধারা এগিয়ে যায় শত্রুর বাংকার লক্ষ্য করে। আবদুল্লাহ আল মাহমুদ এসময় ‘কাট অব পার্টির’ নেতৃত্বে দেন। সম্মিলিত আক্রমণে পাকিস্তানি বাহিনীর প্রতিরোধ সেদিন একে একে ভেঙে পড়তে থাকে। যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর একজন ছাড়া সবাই নিহত হয়। অন্যদিকে মুক্তিবাহিনীর ১৯ জন ও মিত্র বাহিনীর ৫৬ জন শহীদ হন। মহান মুক্তিযুদ্ধে অসীম সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে ‘বীর প্রতীক‘ খেতাব প্রদান করে। ১৯৭২ সালে তিনি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ভিপি নির্বাচিত হন। পরে মেডিকেল কন্সালটেন্ট হিসেবে ৪ বছর ইরাকে ছিলেন। তিনি বাকশালের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন এবং ১৯৯১ সালে তিনি শেরপুরে-৩ আসনে বাকশালের প্রার্থী হিসেবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। বর্তমানে তিনি একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে অধ্যাপনা করছেন।
কাজী সালমা সুলতানা