দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কিংবদন্তি ও সাবেক প্রেসিডেন্ট নেলসন ম্যান্ডেলার আজ ১০৪তম জন্মবার্ষিকী। এই মহান নেতাকে সম্মান জানিয়ে ১৮ জুলাইকে ম্যান্ডেলা দিবস ঘোষণা করেছে জাতিসংঘ। নেলসন ম্যান্ডেলা ১৯১৮ সালের ১৮ জুলাই ব্রিটিশ দক্ষিণ আফ্রিকার এমভেজোর এক অভিজাত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলায় তার নাম রাখা হয় ‘রোলিহলাহলা’, যার অর্থ হলো গাছের ডাল ভাঙে যে অর্থাৎ ‘দুষ্টু ছেলে’। স্কুলে পড়ার সময় তার শিক্ষিকা মদিঙ্গানে তার নামের আগে জুড়ে দেন ‘নেলসন’ শব্দটি। ১৬ বছর বয়সে তার নামকরন করা হয় ডালিভুঙ্গা। পরে রোলিহলাহলা ডালিভুঙ্গা ম্যান্ডেলা হয়ে ওঠেন ‘নেলসন ম্যান্ডেলা’। ফোর্ট হেয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে ম্যান্ডেলা জড়িয়ে পড়েন রাজনীতিতে। পরে সেখান থেকে চলে যান জোহানসবার্গ। সেখানে তিনি তার স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। ১৯৪৩ সালে তিনি যোগ দেন আফ্রিকার ন্যাশনাল কংগ্রেসে এবং ১৯৪৪ সালে ইয়ুথ লীগ প্রতিষ্ঠায় তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। এর পরই তিনি জড়িয়ে পড়েন আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনে। একই সঙ্গে তিনি কাজ শুরু করেন একজন আইনজীবী হিসেবেও। ১৯৬০ সালে শার্পভিলে কৃষ্ণাঙ্গ বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশের গুলিতে ৬৯ জন নিহত হলে বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলন তীব্র হয়ে ওঠে। ১৯৬২ সালে তাকে দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী সরকার গ্রেপ্তার করে এবং যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। ম্যান্ডেলা দীর্ঘ ২৭ বছর কারাবাস করেন। ১৯৯০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি তিনি কারামুক্ত হন। এরপর তিনি তার দলের হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ সরকারের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় অংশ নেন। এর ফলে ১৯৯৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদের অবসান ঘটে এবং বহু বর্ণভিত্তিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। নেলসন ম্যান্ডেলা দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রপতি হিসেবে ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৯ সালের ১৪ জুন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। শুধু দক্ষিণ আফ্রিকা নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠাতেও তিনি ভূমিকা রাখেন। গণতন্ত্র ও সামাজিক ন্যায়ের প্রতীক হিসবে নেলসন ম্যান্ডেলা ২৫০টিরও অধিক পুরস্কার পেয়েছেন। এর মধ্যে ভারত সরকার প্রদত্ত ১৯৯০ সালে ভারতরতœ পুরস্কার ও ১৯৯৩ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার উল্লেখযোগ্য। তিনি ১৯৮৮ সালে শাখারভ পুরস্কারের অভিষেক পুরস্কারটি যৌথভাবে অর্জন করেন। ২০১৩ সালের ৫ ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা
