Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 12:07 am

স্মরণীয়-বরণীয়

প্রথিতযশা নজরুলসংগীত শিল্পী ফিরোজা বেগমের আজ ৯৬তম জন্মবার্ষিকী। তিনি ১৯২৬ সালের ২৮ জুলাই গোপালগঞ্জের রাতইল ঘোনাপাড়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা খান বাহাদুর মোহাম্মদ ইসমাইল ছিলেন খ্যাতনামা আইনজীবী। মা কওকাবন্নেসা বেগম ছিলেন সংগীতানুরাগী। ফিরোজা বেগম দশ বছর বয়সে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের সান্নিধ্যে আসেন এবং তার কাছে সংগীতে তালিম গ্রহণ করেন। পরে তিনি কলকাতায় চিত্ত রায়ের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে সংগীত শিক্ষা শুরু করেন। এরপর তৎকালীন উপমহাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সুরকার ও সংগীত পরিচালক কমল দাশগুপ্তের তত্ত্বাবধানে সংগীত চর্চা চালিয়ে যান। ১৪ বছর বয়সে ফিরোজা বেগমের প্রথম গানের রেকর্ড প্রকাশ করে কলকাতার কলম্বিয়া রেকর্ড কোম্পানি। সে সময় থেকেই তিনি কলকাতা বেতারে নিয়মিত সংগীত পরিবেশন শুরু করেন। ১৯৪২ সালে বিখ্যাত গ্রামোফোন কোম্পানি এইচএমভি থেকে প্রথম ৭৮ আরপিএম ডিস্কে তার গানের রেকর্ড বের হয়। ষষ্ঠ শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে ফিরোজা বেগম অল ইন্ডিয়া রেডিওতে গানে কণ্ঠ দেন। নজরুল সংগীত নিয়ে তার প্রথম রেকর্ড বের হয় ১৯৪৯ সালে। ফিরোজা বেগম ১৯৫৫ সালে সুরকার, গায়ক ও গীতিকার কমল দাশগুপ্তের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯৫৪ থেকে ১৯৬৭ পর্যন্ত তিনি কলকাতায় বসবাস করেন। ১৯৬৭ সালে তিনি সপরিবারে দেশে ফিরে ঢাকায় বসবাস শুরু করেন। ফিরোজা বেগম সাত শতাধিক গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। ১৯৮০ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত আমেরিকা, ইউরোপ ও অস্ট্রেলিয়ায় ৩৮০টি একক সারসরি অনুষ্ঠানে অংশ নেন। নজরুলসংগীত ছাড়াও তিনি আধুনিক গান, গজল, কাওয়ালি, ভজন, হামদ ও নাতসহ বিভিন্ন ধরনের সংগীতে কণ্ঠ দিয়েছেন। তার ১২টি এলপি, চারটি ইপি, ছয়টি সিডি ও ২০টির বেশি অডিও ক্যাসেট বেরিয়েছে। নজরুলগীতিতে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি স্বাধীনতা পদক, একুশে পদক, নেতাজি সুভাষ চন্দ্র পুরস্কার, সত্যজিৎ রায় পুরস্কার, নাসিরউদ্দীন স্বর্ণপদক, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি স্বর্ণপদক, শ্রেষ্ঠ টিভিশিল্পী পুরস্কারসহ অসংখ্য পদক ও সম্মাননায় ভূষিত হন। পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাকে বঙ্গসম্মান, মহাগুরু ও ‘বঙ্গ বিভূষণ’ উপাধিতে ভূষিত করে। জাপানের অডিও প্রযোজনা  প্রতিষ্ঠান সিবিএস থেকে পেয়েছেন গোল্ড ডিস্ক। ফিরোজা বেগম ২০১৪ সালের ৯ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।

কাজী সালমা সুলতানা