Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 9:36 pm

স্মরণীয়-বরণীয়

বাংলা গদ্যের প্রথম সার্থক রূপকার, পণ্ডিত, লেখক, সমাজ সংস্কারক, জনহিতৈষী ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের আজ ১৩১তম মৃত্যুবার্ষিকী। তিনি বাংলা গদ্যের প্রথম সার্থক রূপকার। তিনিই প্রথম বাংলা লিপি সংস্কার করে তাকে যুক্তিবহ ও সহজপাঠ্য করে তোলেন। নারীমুক্তির আন্দোলন ও সমাজ সংস্কারক  হিসেবেও তার অবদান উল্লেখযোগ্য। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ১৮২০ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর জেলার বীরসিংহ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ছেলেবেলা থেকেই বিদ্যাসাগর অত্যন্ত প্রতিভাবান ছাত্র ছিলেন। ছাত্রজীবনে পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের জন্য প্রতি বছর তিনি বৃত্তি এবং গ্রন্থ পুরস্কার লাভ করেন। বাংলা ব্যাকরণ, সাহিত্য, অলঙ্কার, বেদান্ত, ন্যায়, দর্শন, তর্ক, জ্যোতির্বিজ্ঞান, হিন্দু আইন এবং ইংরেজি বিষয়ে তিনি জ্ঞান লাভ করেন। সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যে অগাধ পাণ্ডিত্যের জন্য সংস্কৃত কলেজ থেকে ১৮৩৯ সালে তিনি বিদ্যাসাগর উপাধি লাভ করেন। বিদ্যাসাগর মাত্র ২১ বছর বয়সে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের বাংলা ভাষার প্রধান পণ্ডিত পদে যোগদান করেন। তিনি ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে ও সংস্কৃত কলেজে দীর্ঘদিন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। শিক্ষাকে আধুনিক ও সার্বজনীন করতে তিনি নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেন। কলেজে শিক্ষার্থীদের জন্য নামমাত্র বেতনের ব্যবস্থা করেন। ঈশ্বরচন্দ্র ছিলেন নারীশিক্ষার বিস্তারের পথিকৃৎ। নারী শিক্ষা বিস্তারে তিনি প্রায় ৩০০ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। শিক্ষাক্ষেত্রে তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান হলো পাঠ্যপুস্তক রচনা ও প্রকাশ করা। তার  রচিত গ্রন্থের সংখ্যা ৪৪টি। ১৮৫৫ সালে প্রকাশিত তার ‘বর্ণপরিচয়’ বইটি অর্ধশতাব্দী পর্যন্ত বঙ্গদেশের সবার জন্য পাঠ্য ছিল। তাকে ‘বাংলা গদ্যের প্রথম শিল্পী’ বলে অভিহিত করেন  বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিধবা-বিবাহ চালু করা, বহুবিবাহ ও বাল্যবিবাহ নিষিদ্ধ করা এবং স্ত্রীশিক্ষা বিস্তারের জন্য আন্দোলন করেন। তিনি এশিয়াটিক সোসাইটি (কলকাতা) ও বেথুন সোসাইটিসহ আরও কিছু সংগঠনের সদস্য ছিলেন। তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ১৮৫৬ সালে বিধবা-বিবাহ আইন পাস হয়। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর দরিদ্র, আর্ত ও পীড়িত মানুষের পাশে সবসময় থাকতেন। সে জন্য তিনি সাধারণ মানুষের কাছে পরিচিত ছিলেন ‘দয়ার সাগর’ নামে। ১৮৫৮ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো নির্বাচিত হন। ১৮৬৪ সালে  ইংল্যান্ডের রয়্যাল এশিয়াটিক সোসাইটি তাকে সাম্মানিক সদস্য নির্বাচিত করে। তিনি ১৮৭৭ সালে ইম্পেরিয়াল অ্যাসেমব্লিজের সম্মাননা-সনদ লাভ করেন এবং ১৮৮০ সালে সিআইই হন। বাংলার জাগরণের এই পুরোধা ব্যক্তিত্ব ১৮৯১ সালের ২৯ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন। কাজী সালমা সুলতানা